মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ও নওদায় পুলিশি গ্রেফতারি
পুবের কলম প্রতিবেদক: মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ও নওদা থেকে যে ৪ জন সাধারণ মানুষ ও পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের সন্তানকে অসম ও রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়েছে গেছে, সোমবার তাদের মা, স্ত্রী, বোন ও ভাইয়েরা পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের দফতরে এসে বেআইনি গ্রেফতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। এদের মধ্যে ছিলেন ‘জঙ্গি’ বলে অসম এসটিএফ দ্বারা গ্রেফতারকৃত আব্বাসের মা উম্মে হাবিবা, আব্বাসের বড় বোন জয়নাব বিবি, আব্বাসের বোন কুলসুম বিবি ও রোকেয়া বিবি। কথিত ‘জঙ্গি’ মিনারুলের মা আসমা বিবি, মিনারুলের বোন টগরা বিবি, মিনারুলের ছেলে মুহাম্মদ মানোয়ার প্রমুখ। এছাড়া ছিলেন কেরল থেকে গ্রেফতারকৃত এই অঞ্চলের সাদ মুহাম্মদের ভাই টিঙ্কু শেখ।
তাঁরা সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, সদস্য সাইরাস ম্যাডান ও সদস্য জামাল আহমেদকে জানান, গ্রেফতাকৃত তাঁদের সন্তান ও আত্মীয়রা কোনওভাবেই কোনও জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। তাদের ঘরে তল্লাশি করেও কিছুই পাওয়া যায়নি। কুরআন শিক্ষার নুরানী কায়দাকে সিজ করে সন্দেহজনক আরব বইপত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সংখ্যালঘু কমিশনকে তাঁরা আরও জানান, তাঁরা প্রত্যেকেই গরিব পরিবারের সদস্য। তাঁদের পক্ষে অসমে গিয়ে মামলা চালানো সম্ভব নয়। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার যেন তাঁদের সহায়তা প্রদান করে। কমিশন প্রত্যেকেরই বক্তব্য ঠিকভাবে নোট করে। তাঁরা আরও জানান, ‘‘জঙ্গি’ বলে গ্রেফতারকৃত মিনারুল ও আব্বাসের খোঁজ পাওয়া গেছে। অসম এসটিএফ তাঁদের গ্রেফতার করে গুয়াহাটিতে নিয়ে যায়। বহরমপুরের উকিল অ্যাডভোকেট বকুল সাহেবের তৎপরতায় গুয়াহাটির একজন উকিলের সাহায্যে আব্বাসের বোন গুয়াহাটি গিয়ে সেখানকার সেন্ট্রাল জেলে আব্বাস ও মিনারুলের সাক্ষাৎ পায়।’’ কী অপরাধে তাঁরা গ্রেফতার হল, তার কিছুই এই দুই ‘জঙ্গি’ বুঝতে পারছে না। চোখে অশ্রু নিয়ে তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের যেন আইনজীবীর সাহায্যে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়।
মিনারুল ও আব্বাসের মা এবং সেইসঙ্গে সাদ মুহাম্মদের ভাই টিঙ্কু শেখ কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের সন্তান ও ভাইরা যে ‘জঙ্গি’ নয়, তা প্রমাণ করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেন তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। দুই মায়েরই একই কথা, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দাও। মিনারুলের মা এও জানিয়েছে, তাঁর পুত্র মিনারুল মানসিক রোগী। বহুদিন ধরে সে বহরমপুরের সরকারি হাসপাতাল এবং জেলার মানসিক রোগের বিখ্যাত ডাক্তার হাসান সাহেবের চিকিৎসাধীন। মিনারুলের মা তাঁর চিকিৎসার বেশকিছু প্রেসক্রিপশনও কমিশনের কাছে জমা দেয়।
এই ভিকটিম পরিবারগুলির সঙ্গে ছিলেন মুর্শিদাবাদের মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর-এর আবদুল হামিদ সরকার, রাহুল চক্রবর্তী, আলতাফ আহমেদ ও টুম্পা ঝাঁ।
সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান জানান, দেশের কোনও নাগরিককেই অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা উচিত নয়। আর খুব দরিদ্র পরিবারের প্রায় অশিক্ষিত সন্তানদের ‘জঙ্গি’ তকমা প্রদানও দুঃখের বিষয়। এ বিষয়ে ভিকটিম পরিবারগুলি যাতে ইনসাফ পায় তার জন্য সংখ্যালঘু কমিশন সহায়তা করবে।