ইনামুল হক, বসিরহাট: এতিম কন্যাদের শিক্ষাপ্রদান ও লালন পালনের পর উপযুক্ত বয়সে তাদের বিয়ে দিয়ে মহৎ সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব পালন করলো উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার মাটিয়া থানার অন্তর্গত পানিগোবরা আজিজিয়া জিয়াউলিয়া বালিকা এতিমখানা।
রবিবার এতিম কন্যাদের একটি বিবাহ আসরের আয়োজন করা হয় এখানে। এই প্রতিষ্ঠানের বিবাহযোগ্যা দশটি এতিম কন্যার সঙ্গে ১০ জন উপযুক্ত পাত্রের শুভ শাদী মোবারক সম্পন্ন হয় এদিন। পাত্র এবং পাত্রী উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে একেবারেই বিয়ে বাড়ির আনন্দের পরিবেশেই এই শাদী মোবারক সম্পন্ন হয়। সোনার কানের দুল, অলংকার , ঘড়ি, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাট গদি, তোষক, কম্বল থেকে শুরু করে শোকেস ইত্যাদি উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া হয় প্রত্যেক নব দম্পতিকে।
এদিন ভুরি ভোজে মধ্যবিত্তের শাদী অনুষ্ঠানের মত খাদ্য তালিকায় নান পরোটা, চানা মটর, বিরিয়ানি, স্যালাড, মিষ্টি চাটনি পাঁপড় ছিল। পাত্রদের জন্য বিশেষ খানার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছাড়াও সমাজের বিশিষ্টজনেরা। শাদী মোবারক অনুষ্ঠানে সামিল হয় এই এতিম খানা ও মিশনের অন্য ছাত্রীরাও।
পানিগোবরা গ্রামের পীরে কামেল ওস্তাদুল হুফফাজ শাহ সুফি হাফেজ মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. সাহেবের রুহানি দোয়া ও তাঁর স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত এই এতিমখানা ও মিশনে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার শেষে হাতের কাজ ও স্বনির্ভর হওয়ার নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মেয়েদের।
তারপর তাদের সংসার জীবনে প্রবেশের ব্যবস্থা হিসেবে এই শাদির আয়োজন করা হয়। জানালেন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক পীরজাদা মোঃ মাসুম বিল্লাহ সাহেব। তিনি আরো জানান, এর আগে বিভিন্ন সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের ১৯ জন এতিম কন্যার শাদী মোবারক সুসম্পন্ন করা হয়েছে। এপর্যন্ত মোট ২৯টি এতিম কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এই কর্মযজ্ঞের পিছনে সহযোগিতা করে চলেছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষা দরদী আলহাজ্ব মোস্তাক হোসেন, হুগলির শ্রীরামপুরের সমাজসেবি হাজী ওজিফার রহমানসহ বিশিষ্টজনেরা।
এদিনের বিয়েতে নব দম্পতি রেবেকা খাতুন-শাহজাহান মন্ডল, সুমনা পারভিন-আব্দুল কাইয়ুম মন্ডল, রাবেয়া খাতুন -বাকীবিল্লাহ গাজী, ফেরদৌসী খাতুন-রাকিবুল আলী, নুরনাহার খাতুন-আলমগীর নাইয়াসহ ১০ জোড়া পাত্র-পাত্রীর দুই হাত এক করে দেন পীরজাদা মাসুম বিল্লাহ। পিতৃ সমতুল সম্পাদক সহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় চোখের পানিতে বুক ভেসে যায় নার্গিস পারভিন-আসিফ উল্লাহ মোল্লা, আরবিনা খাতুন- আব্দুল কাইয়ুব গাজী, জাহানারা খাতুন- এজার উদ্দিন মন্ডল, তুহিনা খাতুন-শেখ ইনজামুল গাজী, নার্গিস খাতুন- আল-আমিন সর্দারসহ সকলের।
চোখে পানি এসে যায় কর্মকর্তা ও আত্মীয়-স্বজনদেরও। সম্পাদক পীরজাদা মাসুম বিল্লাহ তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন ও এতিম কন্যাদের এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে দ্বীনের পথে চলার জন্য দোওয়া করেন। প্রতিষ্ঠানের তরফে জানানো হয় এবছর থেকে এতিম বালিকাদের পৃথক ক্যাম্পাসে রেখে পানিগোবরার মূল ক্যাম্পাসে এতিমখানা ও বালকদের জন্য তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মিশন চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভর্তি শুরু হয়েছে বলে জানান সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ।