নয়াদিল্লি: ‘প্রিয়দর্শীনি’র মতো প্রথম দর্শনেই সংসদের মন জয় করলেন রাজীব-তনয়া প্রিয়াঙ্কা। ওয়েনাড়ের মানুষের মন জয় করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছেন। সংসদে প্রথম ভাষণে সকলকে মুগ্ধ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। শুক্রবার সংবিধান গ্রহণের ৭৫তম বার্ষিকীর উপর আলোচনায় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ভাষণ দেন তিনি। ভাষণ দেওয়ার সময় দৃপ্ত ভঙ্গি, শধ চয়ন তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধিকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
নেহরু-গান্ধি পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি প্রিয়াঙ্কা তাঁর এদিনের বক্তব্যে জাতিভিত্তিক জনগণনার উপরেই মূলত জোর দেন। ইন্দিরা আজও স্মরণীয়। কিন্তু প্রথম দিনে প্রিয়াঙ্কা তাঁর ভাষণে নিজেকে সবার কাছে নতুন করে চেনালেন। বোনের ভাষণে মুগ্ধ দাদা রাহুল গান্ধিও। শুক্রবার সংসদে তাঁর ভাষণ চুপচাপ শুনছিলেন শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে ইন্দিরার চেহারার সাদৃশ্যের কথা বারবার বলেছেন কংগ্রেস নেতা-সমর্থকরা। কিন্তু স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধি তাঁর নাতনি প্রিয়াঙ্কা সম্পর্কে বলেছিলেন, দেশের মানুষ একদিন প্রিয়াঙ্কার মধ্যেই আমাকে খুঁজে পাবে। লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধি বোন প্রিয়াঙ্কার ভাষণ শুনে বললেন, আমার প্রথম বক্তব্যের থেকে অনেক ভালো হয়েছে প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য।
Read More: ৫ বছরে ইডি মামলায় দোষী মাত্র ৬.৪২ শতাংশ: সংসদে কেন্দ্র
সংসদে প্রথম দিন হলেও তাঁর মধ্যে কোনও আড়ষ্ঠতা ছিল না। শুরু থেকেই কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তিনি আক্রমণাত্মক ছিলেন। শাসকদলের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, শাসকদলের সাংসদরা সবসময় পুরনো দিনের কথা টেনে আনেন। অতীতের কথা না বলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলুন। সবসময় ১৯৭৫-এ কি হয়েছে…আপনারা এখনকার কথা কেন বলেন না? আপনারা কি করছেন, দেশের সমস্ত দায়-দায়িত্ব কি জওহরলাল নেহরুর? আপনারাও কিছু কাজের কাজ করুন। কেন্দ্রকে নিশানা করে তিনি বলেন, জাতিভিত্তিক জনগণনা সময়ের দাবি। জাতিগণনা করতে পারলে সরকারি নীতি রূপায়ন অনেকটাই সহজ হবে। দেশের মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে পারে।
এদিন তাঁর প্রথম ভাষণ শুনতে সংসদে উপস্থিত ছিলেন স্বামী রবার্ট বঢরা ও তাঁদের ছেলে রাইহান। সংবিধান গ্রহণের ৭৫তম বার্ষিকীতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংবিধান হাতে নিয়ে তিনি বলেন, একে সংবিধান বলে। সঙ্ঘ বিধান নয়। সংবিধান আমাদের সুরক্ষা কবচ। দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখে। ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আশা-আকাঙ্খা পূরণের মূল উৎস। সংবিধানই প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিককে শক্তি দেয় যে, তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার অর্জনে মানুষ যখন আওয়াজ তুলবেন শাসকপক্ষকে জনতার দরবারে ঝুঁকতেই হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত ১০ বছরের বিজেপি শাসনে শাসকদলের সহকর্মীরা মুখে বড় বড় দাবি করেন। কিন্তু তাঁরাই এই রক্ষাকবচকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার কোনও চেষ্টার কসুর করছেন না। দেশের ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাজত্ব করা যাবে না। দেশ সংবিধান মেনেই চলবে। কিন্তু এখন দেশের আমজনতাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। যারা তাদের মতপ্রকাশ করছে তাঁদের নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।