ঢাকা: সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নানা খবর নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সরকার। দেশটিতে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর সাঁড়াশি আক্রমণ হচ্ছে বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। কিন্তু কোথায় সেসব ঘটনা ঘটছে, কতজন নিহত হয়েছে, সেসব কোনও খবরই দিচ্ছে না মিডিয়া। গণমাধ্যমের এথিক্স অনুযায়ী, কোনও খবর প্রচার করলে তার পিছনে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকতে হবে। কিন্তু এ সবের বালাই নেই মিডিয়ায়। পুরনো ফুটেজ, এআই ইমেজ, বিকৃত ছবি দেখিয়ে জোর প্রচার চলছে। আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের লোকেরা ছাত্র-জনতার ঝাঁটাপেটা খেয়ে পালিয়ে গিয়ে এখন দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং তাজউদ্দীনপুত্র সোহেল তাজ। তাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতা। তার ছেলে সোহেল তাজ আওয়ামি লিগের হয়ে ভোটে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনিই এখন হাসিনার দলকে তুলোধনা করছেন।
বৃহস্পতিবার ফেসবুকে সাতটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে এই মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক রাজনৈতিক নেতা। প্রথম ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনার একটা ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন। যিনি আত্মতৃপ্তি নিয়ে চেয়ে দেখছেন মুসলমান আর ইসকনদের লড়াই। নিচটা রক্তাক্ত। এরপরের ছবিটি রাজধানীর মোল্লা কলেজে হামলার। সেখানে লেখা, ‘মোল্লা কলেজে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ।’ পরবর্তী ছবিটি কালবেলা পত্রিকার শেয়ার করা একটি কার্ড। যেখানে শেখ হাসিনার ফোনে কথা বলা একটি ছবি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাস্যোজ্জল একটি ছবি কোলাজ করা। ছবির উপরে লেখা, ‘শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস, ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলের নির্দেশনা।’ এর পরেরটা দু’টি ছবি উপরে নিচে দিয়ে জোড়া লাগানো। সে ছবি দু’টিতে ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজনকে দেখানো হয়েছে। ইনসেটে শেখ হাসিনার একটি ছবিও আছে। পরের ছবিটি আনসার বাহিনীর সদস্যদের আন্দোলনের। সমকাল পত্রিকার লোগো সম্বলিত ওই ছবিটির উপরে লেখা, ‘এক দফা দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করলো আনসার সদস্যরা।’ ছবিগুলো পোস্ট করে সোহেল তাজ ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘হত্যা, গুম, খুন, গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, গণতন্ত্র ধ্বংস করে, দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে শেষ করে ছাত্র-জনতার ঝাঁটাপেটা খেয়ে পালিয়ে গেয়ে এখন দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কত বড় নির্লজ্জ বেহায়া হলে দেশটাকে এক মুহূর্তের জন্য শান্তিতে থাকতে দেবে না ও। প্রথমে ডিজিটাল জুডিশিয়াল ‘কু’-এর চেষ্টা, তারপর একের পর এক অপচেষ্টা- আনসার বাহিনী দিয়ে, ব্যাটারি রিকশা, নূর হোসেন দিবসে ‘ট্রাম্প’ কার্ড, ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শাহবাগে মানুষের জমায়েত করার চেষ্টা, বিভিন্ন কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা আর এবার ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে লাশের উপর ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা।’
বিদেশি গণমাধ্যমে ভুয়ো খবর: বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস উইং ফ্যাক্টস জানিয়েছে, কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করছে, চট্টগ্রামে নির্মমভাবে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। দাবিটি মিথ্যা এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে সবাইকে যেকোনও প্রকার উসকানিমূলক, মিথ্যা প্রতিবেদন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জমা দেওয়া ওকালতনামা দেখা যাচ্ছে, অ্যাডভোকেট সুবাশিশ শর্মা তার আইনজীবী। আমরা সবাইকে যেকোনও প্রকার উসকানিমূলক, মিথ্যা প্রতিবেদন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশে বন্ধ সব ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল: বুধবার রাত থেকে এমন একটি খবর রিপাবলিক টিভি ফটোকার্ড আকারে প্রকাশ করেছে। আর সেটি নিয়ে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের প্রচারণা চালানো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে এখনও পর্যন্ত বিষয়টি গুজব বলে জানানো হয়েছে। কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ জানিয়েছে, এটি একটি অপপ্রচার। সব চ্যানেলই চলছে।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার কিছু পরে ‘রিপাবলিক বাংলা’র ফেসবুক পেজে একটি খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে বন্ধ করা হলো সব ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল। আজ থেকে বন্ধ করা হল সম্প্রচার। ভারতীয় মিডিয়ায় আপত্তি কেন মুহাম্মদ ইউনূসের?’ তবে তাদের এমন দাবির কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। কারণ বাংলাদেশের টেলিভিশনে কেবল সংযোগে সবক’টি ভারতীয় চ্যানেল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এরকম বহু মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করছেন বাংলাদেশের মানুষ। এ সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করতে গুরুতর ভূমিকা নিচ্ছে।