পুবের কলম প্রতিবেদক: বুধবার হাওড়ার শরৎ সদন এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হল। তানজিমূল মাদারিস লিল বানাত-এর সঙ্গে নথিভুক্ত ১০০-র উপর মাদ্রাসার সংগঠক এবং প্রধান শিক্ষকরা হাজির হয়েছিলেন এই জোট সংস্থার ১৫তম সম্মেলনে। উদ্দেশ্য, পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত মহিলা মাদ্রাসা রয়েছে তার সবগুলিকে একই ছাতার নিচে এনে তাদেরকে আরও সংহত ও সক্রিয়ভাবে মাদ্রাসা পরিচালনায় সাহায্য করা। সিলেবাস ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। এ জন্য তানজিমূল মাদারিস লিল বানাত-এর পরিচালকরা যে প্রভূত পরিশ্রম করেছেন তা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মহিলা মাদ্রাসাগুলির শরদ সদনে প্রতিনিধিত্ব দেখেই বোঝা গেল।
পশ্চিমবঙ্গের মহিলা মাদ্রাসার সংগঠন তানজিমূল মাদারিস লিল বানাত (প.ব.)-এর ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হল সংগঠক ও পরিচালকদের এক সম্মেলন। বুধবার হাওড়া ময়দানের শরৎসদনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের প্রবীণ অধ্যাপক মুফতি ইউসুফ। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, প্রধান বক্তা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান। এছাড়াও ছিলেন আলিয়ার প্রাক্তন অধ্যাপক জনাব মাওলানা মনজুর আলম সাহেব, হুদা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ মতিউর রহমান মাদানি, ড. ওবাইদুর রহমান, মুহাম্মদ জিয়াউল, আলহাজ্ব মুরসালিন, ক্বারী রফিকুল ইসলাম। উপস্থিত অতিথিদের সম্মানজ্ঞাপন করে সংবর্ধনা জানান সংস্থার সভাপতি মাওলানা আবুল হাসান, সম্পাদক মুফতি সিরাজুল ইসলাম। মহিলা মাদ্রাসাগুলিকে নিয়ে তানজীম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন সংগঠনের আহবায়ক মুফতি মুজিবুর রহমান।
প্রধান বক্তা আহমদ হাসান ইমরান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইসলামের প্রচার প্রসার অগ্রগতিতে মহিলাদের ভূমিকা পুরুষের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ‘একজন নারী যদি শিক্ষিত হয় তাহলে তিনি ইসলামি শিক্ষার আলোকে সমগ্র পরিবারকে আলোকিত করে। কারণ, নারীই হচ্ছে ঘরের মালকিন। পরিবারের পরিচালক। ফলে নারী শিক্ষার উপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।’ ইমরান বলেন, বর্তমানে বাংলার মুসলিম সমাজের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা ও জীবিকার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতিও হচ্ছে।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, আগে বাংলায় আরবির চর্চা প্রায় উঠেই গিয়েছিল। তবে এখন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বেশ কিছু জায়গায় আরবি ভাষা সাহিত্যের চর্চা হচ্ছে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমাদের অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের মধ্যে ইসলামি শিক্ষার প্রতি মহব্বত গড়ে উঠছে। তবে তার মাঝেও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। সন্তান যাতে জাহান্নামের পথ পরিত্যাগ করে সবসময় জান্নাতের পথে থাকে তার জন্য তাদের উৎসাহিত করতে হবে, তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আর এ বিষয়েও মায়ের ভূমিকাই হচ্ছে প্রধান।
মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান ইমরান আরও বলেন, একশ্রেণীর গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়, ইসলামে নারীদের অবদমিত করে রাখা হয়, অত্যাচার করা হয়। এই ধরনের ভুল প্রচারের বিরুদ্ধে তিনি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। বলেন, প্রথম ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করেছিলেন মা খাদিজা রা.। ইসলামের জন্য প্রথম শহীদ হয়েছিলেন তিনিও একজন নারী। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় মরক্কোতে অবস্থিত। ৮৫৭ খৃস্টাধে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন মুসলিম নারী।
আসলে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাকে নারী বিরোধী বলে প্রচার করে অমুসলিম নারীদের ভয় দেখানো হয়। তবে এতো কিছুর পরেও ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানিতে যারা ইসলাম গ্রহণ করছে, তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যায় বেশি। আশার কথা এটিই যে, মহিলারা বুঝতে পেরেছেন কোথায় তাদের মর্যাদা। আর কোন ব্যবস্থা মেয়েদের সম্মানিত করছে। তাই ইউরোপ আমেরিকার নারীরা ইসলাম কবুল করছে। ইমরান উপস্থিত শ্রোতাবর্গের কাছে আহবান জানান, ইসলামের এই আদর্শ গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য অমুসলিমদের কাছেও প্রচার করতে হবে। তাঁদের জানাতে হবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম কী। তাহলেই সম্প্রীতি গড়ে উঠবে।
সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, মেয়েরা ফুলের মতো। তাদের যত্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাবেন। মেয়েরা আগামী দিনের গৃহিনী, মা। তাঁদের সেই দায়িত্ববোধ যাতে গড়ে ওঠে সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার উপরেও তিনি জোর দেন। তিনি বলেন, ইসলামের দশজন গুণসম্পন্ন নারীর জীবনীও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। যাতে নারীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি জীবনযাপনের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। সভায় বক্তব্য রাখেন দারুল উলুম দেওবন্দের অধ্যাপক মুফতি ইউসুফ। তাঁর ভাষণে তিনি সকলকে মুগ্ধ করেন। আর মহিলা মাদ্রাসার গুরুত্বের প্রতিও তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন শেখ মতিউর রহমান মাদানি প্রমুখ।