পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বর্তমানে নির্বাচনী আবহে হট টপিক হয়ে যায় ‘মুসলিম ভোট’। কেউ মুসলিমদের সংরক্ষণের ইস্যুতে কথা বলেন, তো কেউ আবার তাঁদের গায়ে ‘অনুপ্রবেশকারীর’ তকমা সাঁটাতে ব্যস্ত থাকেন। নির্বাচনী সুবিধা পেতে মুসলিম নামের বহুল ব্যবহার এখন ট্রেন্ডিং রয়েছে। আদৌ কি সংখ্যালঘুদের নিয়ে সেই অর্থে কেউ ভাবে? রাজ্য থেকে জাতীয় স্তরে প্রতিটি দলই মুসলিম ভোট পেতে মরিয়া হলেও মুসলিম প্রার্থী দিতে বেজায় নাখুশ তারা।
লোকসভা থেকে শুরু করে বিধানসভা দু’দিকেই চোখ ফেরালে দেখা যাবে প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যার মুসলিমদের প্রতিনিধি খুবই কম। এমনকী দেশের ২৮টি রাজ্যের বিধানসভায় ৪০০০- এরও বেশি বিধানসভা সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু সেখানেও মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব নামমাত্র। বর্তমানে এই আইনসভার মাত্র ৬ শতাংশ মুসলিম।
এমনকি দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ইউপিতেও প্রায় ১৬ শতাংশ মুসলিম রয়েছেন। কিন্তু সেরাজ্যেও বিধানসভায় মাত্র ৭ শতাংশ মুসলিম প্রতিনিধি রয়েছেন। তবে বর্তমানে সংঘটিত ১৪ রাজ্যের ৪৮ টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচনে এক নতুন চিত্রের দেখা মিলেছে।
অতীতের তুলনায় খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে। সেখানে উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে মুসলিম প্রতিনিধির সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে নয় জন, ঝাড়খণ্ডে ৪ জন মুসলিম প্রার্থী নতুন করে বিধানসভায় আসল দখল করেছেন।
মহারাষ্ট্রে জয়ী হওয়া মুসলিম প্রার্থীদের মধ্যে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), এবং শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) সহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা রয়েছেন৷ অন্যদিকে ঝাড়খণ্ডে জয়ী হওয়া মুসলিম প্রার্থীরা কংগ্রেস, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এর হয়ে ভোট ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আর বিপুল মার্জিনে জয়লাভ’ও করেন।
উভয় রাজ্যে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি রাজনৈতিক ইতিহাসের যুগান্তকারী ঘটনা বলেও মনে করছেন অনেকে। মহারাষ্ট্রে, কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এনসিপির মতো দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ আসন নিশ্চিত করতে মুসলিম প্রার্থীগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভোট ময়দানে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব বাড়তে থাকলে আগামী সময়ে ব্যাপক ভাবে রাজনীতির পট পরিবর্তন হতে চলেছে বলে মত একাংশের।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে মোদি সরকার। সে সময় ৩০ জন মুসলিম নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে পা রেখেছিলেন। এর মধ্যে মাত্র একজন সাংসদ ছিলেন বিজেপির। একই সময়ে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে, ৫৪৩ সদস্যের সংসদে ২৭ জন মুসলিম এমপি হয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে একজনও বিজেপির সাংসদ ছিলেন না। ২০০৬ সালে, সরকার দ্বারা গঠিত সাচার কমিটি রিপোর্ট করেছিল যে দেশে মুসলমানদের অবস্থা দলিত এবং উপজাতিদের চেয়েও খারাপ। স্বাক্ষরতা, উপার্জন এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে মুসলিমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। কমিটি মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে ছিল। কিন্তু ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও মুসলমানদের ব্যাপারে কোনও সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করা এখনও সম্ভব হয়নি।