পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ধর্মত্যাগী লেখক সলমন রুশদির পুস্তকটি এতদিন ভারতবর্ষে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট এই কুখ্যাত পুস্তকটির উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা তুলে নিয়েছে। ফলে এই পুস্তকটি আমদানি করতে বা ভারতে এর কোনও সংস্করণ বা অনুবাদ প্রকাশ করতে আর কোনও বাধা রইল না। গেরুয়াপন্থী সন্দীপন খান নামে এক ব্যক্তি এই বইটির আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছিলেন ২০১৯ সালে।
নিজেরা প্রচুর বই নিষিদ্ধ করেছেন বা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। সে শিবাজির উপর মুক্তমনা লেখকদের গবেষণামূলক পুস্তক হোক কিংবা ঐতিহাসিক বা আধুনিক কোনও চলচ্চিত্র হোক।
সকলেই জানেন, কুখ্যাত লেখক সলমন রুশদি তাঁর ‘শয়তানের পদাবলী’ বা ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ পুস্তকটিতে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অপমান করার ভরপুর চেষ্টা করেছেন। শুধু তাই নয়, কাবা শরীফ এবং নবীজির পবিত্রা স্ত্রীদের উপরও এই সলমন রুশদি অকারণে এবং ঐতিহাসিক কোনও তথ্য ছাড়াই কলঙ্ক আরোপের চেষ্টা করেন। স্বাভাবিকভাবেই সারা দুনিয়ার মুসলিম জনগণ এই অপমান বরদাশত করেননি। তারা দুনিয়া জুড়ে বিক্ষোভ করেছেন এবং বিক্ষোভ করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রাণ দিয়েছেন। আর সলমন রুশদির সাহিত্যের নামে এই অপকর্মের বিরুদ্ধে ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেইনি একটি ফতোয়া জারি করেন। পবিত্র কুরআন বলেছে, কেউ যদি কোনও পবিত্রা নারীর উপর কলঙ্ক আরোপের চেষ্টা করে, তাহলে তার কঠোরতর শাস্তি হওয়া উচিত। ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেইনি তাঁর ফতোয়া বা অভিমতে রুশদির জন্য এই ধরনের কঠোর শাস্তির কথাই ঘোষণা করেন।
হ্যাঁ, পশ্চিমা শাসক এবং ইসলাম বিরোধীদের কাছে সলমন রুশদি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আর সলমন রুশদি এই পুস্তকটি থেকে কামাই করেন লক্ষ লক্ষ মিলিয়ন পাউন্ড এবং ডলার। ভারত ও উপমহাদেশে এই পুস্তকটির বিরুদ্ধে মুসলিমরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এই আন্দোলনে বেশ কয়েকজন শাহাদতও বরণ করেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু দেশে এই বইটির মুদ্রণ ও অনুবাদ প্রকাশ করা নিষিদ্ধ হয়। নিষেধাজ্ঞা জারি হয় পুস্তকটি অন্য দেশ থেকে আমদানি করার উপরও।
১৯৮৮ সালে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজীব গান্ধি সরকার ‘শয়তানের পদাবলী’ পুস্তককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তখন এর আমদানিও নিষিদ্ধ হয়। দিল্লি হাইকোর্টে মামলাটি ওঠার পর আরটিআই করে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বইটির আমদানি ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তা এখন বিলকুল গায়েব। ফলে হাইকোর্ট অন্য কোনও যুক্তি শুনতে চায়নি। হাইকোর্টের দুই বিজ্ঞ বিচারপতি রেখা পাল্লি এবং সৌরভ ব্যানার্জি এক রায় দিয়ে বলেছেন, ‘যেহেতু ওই বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাচ্ছে না, তাই আমরা ধরে নিচ্ছি এই ধরনের কোনও বিজ্ঞপ্তি ছিলই না। তাই ‘শয়তানের পদাবলী’ আমদানি করতে কোনও বাধা নেই।’
যেহেতু ‘বাধা নেই’ বলে দিল্লি হাইকোর্ট বলছে, তাই এই বইটি ভারতে প্রকাশ ও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ প্রকাশেও আর কোনও বাধা রইল না। ফলে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে এই অশালীন, ধর্মে আঘাত প্রদানকারী কুৎসিত পুস্তকটির উপর ভারতে কোনও নিষেধাজ্ঞা রইল না। তা এখন আমদানি ও প্রকাশ করা যাবে।
এ সম্পর্কে বিভিন্ন মুসলিম বিদগ্ধ ব্যক্তি ও সংগঠন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আইনজীবীরাও। সলমন রুশদির এই পুস্তকটির নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কে পুবের কলম-এ আগামীকাল বিশদ তথ্য প্রকাশিত হবে।