পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ জনসংখ্যায় চিনকে পিছনে ফেললেও ভারতেরই দুই অঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বেশি বেশি করে সন্তানের জন্ম দেওয়ার আবেদন করছেন। রাজনৈতিক অবস্থানে দুই মুখ্যমন্ত্রী আবার ভিন্ন মেরুতে অবস্থিত। একজন এনডিএ শিবিরে থাকা এন চন্দ্রবাবু নাইডু, অন্যজন হলেন ইন্ডিয়া জোটের শরিক এম কে স্ট্যালিন। স্ট্যালিন তো নবদম্পতিদের ১৬টি করে বাচ্চা জন্মের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবার প্রতি জন্মহার কমে যাওয়াতেই দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে এই মতবদল নেতাদের। শুধু জন্মহার কমে যাওয়াই নয়, দেশে এখন করিৎকর্মা যুবকের তুলনায় বয়স্ক-প্রবীণ, পরনির্ভরশীল জনসংখ্যা বিরাট সংখ্যায় পৌঁছেছে। এর ফলে দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যার হারে সরাসরি প্রভাব পড়াতেই নাইডু হোন বা স্ট্যালিন, জনসংখ্যার হার বাড়াতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন।
একে বোধহয় যাবতীয় পাল্টি খাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু আচমকাই বলেছেন, আরও বেশি করে সন্তান উৎপাদন করুন। নিজেই নিজের আগের মন্তব্য করে স্মরণ করে বলেন, আগে আমি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলাম ঠিকই। এখন আমি জনসংখ্যা বাড়ানোর কথা বলছি। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী এও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যাঁদের দু’য়ের বেশি বাচ্চা থাকবে তাঁদেরই রাজ্যের পুরসভা-পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়ার জন্য আইন আসতে পারে।
নাইডুর থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে তামিলনাড়ু মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন নবদম্পতিদের ১৬টি বাচ্চার বাবা-মা হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু কী করে এতগুলি বাচ্চা মানুষ হবে, তাঁদের জন্য রাজ্য কোনও আর্থিক সাহায্য দেবে কিনা, তা অবশ্য তিনি বলেননি। কিন্তু, হঠাৎ করে এই মতিগতি বদলের কারণ কী?
আসলে দেশের মোট জনবিস্ফোরণের হার যেদিকেই গড়াক না কেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বৃদ্ধদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং যুবসমাজের সংখ্যা কমে আসাই মূল কারণ। আসন্ন জনগণনা এবং লোকসভা-বিধানসভা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস কমিটি জনসংখ্যার নিরিখে আগামিদিনে আসন সংখ্যা পুনর্গঠন করবে। আর সেই কারণেই দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে এই ভোলবদল।
এদিক দিয়ে উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে আসন সংখ্যাও বাড়তে পারে। কিন্তু, দক্ষিণ ভারতে জনসংখ্যা কমতে থাকায় সংসদীয় আসন হারাতে হতে পারে। যার সবথেকে খারাপ প্রভাব পড়বে কেরলে। বর্তমানের ২০টি সংসদীয় আসন থেকে একটি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, তামিলনাড়ুতে মাত্র একটি আসন বাড়ার সম্ভাবনা। উত্তরপ্রদেশে বাড়তে পারে ১১ থেকে ১৩টি আসন।
সু-জন্মহার নিয়ন্ত্রণকে ২.১ ধরা হলে মোট পাঁচটি রাজ্য বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মেঘালয় এবং মণিপুর-এর থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। ২০২১-এর একটি হিসাব অনুযায়ী বিহারের এই হার ৩.০২, উত্তরপ্রদেশে ২.৩৮ এবং তৃতীয় স্থানে ঝাড়খণ্ড ২.৩১ এ রয়েছে। তবে জেলাভিত্তিক এই হার আরও শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে কোথাও কোথাও। নির্বীজকরণের জন্য নগদ পুরস্কার এবং বিনামূল্যে ট্যাবলেট বিলি করেও কাজ হয়নি সেই জেলাগুলিতে।
এদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশে এই হার বর্তমানে ১.৫। তার থেকেও খারাপ অবস্থা তামিলনাড়ুর। সেখানে হার ১.৪। পশ্চিমবঙ্গেও তাই। কলকাতায় আরও কম, মাত্র ১। যা দেশের প্রধান বড় শহরগুলির মধ্যে সবথেকে কম। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য শমিকা রবি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে ১২ কোটি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি আছেন, যাঁদের কর্মক্ষমতা এবং জন্ম-সক্ষমতা হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, সক্ষম যুবক-যুবতীর সংখ্যা কমছে। আর যারা মধ্য বয়স্ক আছে, তাঁরাও প্রবীণের দিকে এগচ্ছেন। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে চলেছে।
তিনি বলেন, এটা তেমন সমস্যা হতো না, যদি আমাদের বার্ষিক রোজগার ১০ হাজার ডলার হতো। কিন্তু বার্ষিক ৩ হাজার ডলার কিংবা তার নীচে আয়ের পরিবারের পক্ষে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ আমাদের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশেরই বয়স ৬০এর উপরে। আর সে কারণেই দক্ষিণ ভারতের মতো গোটা দেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ক্রম হ্রাসমান জনসংখ্যার বিচারে নাইডু এবং স্ট্যালিন দুজনেই নিজেদের রাজ্যে অদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই জন্মহার বৃদ্ধির কথা জোর গলায় বলছেন।
1 Comment
Pingback: সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য..! বাহারাইচ কাণ্ডে বাড়ি বুলডোজ নিয়ে চন্দ্রচুড়