রায়পুর, ২০ অক্টোবর: নরবলি প্রথা কি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ভারতে! সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে সেই ন্যক্কারজনক সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে সমাজে। কিছু নিরীহ মানুষকে ‘হাড়িকাঠে’ চড়ানো হচ্ছে নির্দ্বিধায়। কখনও শিশু, বালক, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। আর সামনে শিখণ্ডি হিসেবে রাখা হচ্ছে ‘ধর্মীয় অনুশাসন’।
সম্প্রতি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তিশগড়ে। আধুনিক সমাজে এখনও এই ধরনের বর্বরতার ঘটনা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়, সেখানে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে ধর্মীয় চোখরাঙানির শিকার হতে হচ্ছে। সম্প্রতি ওড়িশার বালানগির জেলায় এক ১১ বছরের বালক সোমনাথ বেমালকে বলি দেওয়া হয়েছে।
সেই ভয়াবহতার আবহে ফের নরবলির ঘটনা সামনে এল ছত্তিশগড়ের দুর্গ জেলায়। কুসংস্কারের আছন্ন হয়ে নিজের ঠাকুমাকে খুন করে তাঁর রক্ত দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করালেন নাতি। ৩০ বছরের গুলশান গোস্বামী নামের ওই যুবক নিজের ঠাকুমাকে হত্যা করে পরে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, দেবতাকে খুশির অভিপ্রায়ে ওই যুবক তার ঠাকুমাকে বলি দিয়েছে।
বিভাগীয় পুলিশ আধিকারিক (ধামধা এলাকা) সঞ্জয় পুরিন্দর জানিয়েছেন, শনিবার রাতে নন্দিনী থানার অধীনে নানকাট্টি গ্রামে এই নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। মৃতার নাম রুক্মিনী গোস্বামী(৭০)। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়রাই পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, গুলশান তার বৃদ্ধা ঠাকুমার সঙ্গে থাকতেন।
তাদের ঘরের খুব কাছেই ছিল একটি শিব মন্দির। গুলশান নিয়মিত লর্ড শিবের পুজোর্চ্চনা করত। শনিবার সন্ধ্যায় গুলশান ঠাকুমাকে ত্রিশূল দিয়ে হত্যা করে তার রক্ত দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করায়। বাড়ি ফিরে এসে একইভাবে নিজেকে ত্রিশূল দিয়ে গলায় আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে রায়পুরের এইমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সঞ্জয় পুরিন্দর জানিয়েছেন, একাধিক ধারায় অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
Read more: স্বাস্থ্য বিমায় এবার থেকে দিতে হবে না জিএসটি
উল্লেখ্য, ধর্মীয় অজুহাতে নিজের অন্ধভক্তিকে সামনে রেখে মানুষকে নির্যাতন নতুন কোনও ঘটনা নয়। একসময় সমাজে সতীদাহ প্রথা তার বীজ বপন করে ধর্মীয় রীতির ভণ্ডামিতেই। সেখানে কিছু নিরীহ অল্পবয়সী গৃহবধূকে তার মৃত বৃদ্ধ স্বামীর সঙ্গে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত। জলজ্যান্ত পোড়ার আওয়াজ যাতে কেউ শুনতে না পায় তার জন্য গগনভেদী ঢাকঢোল পেটানো হত। কিন্তু সেই ধর্মীয় অনুশাসনের আড়ালে ছিল স্বার্থলোভী মানুষের সম্পত্তির লোভ। পরে কাঠখড় পুড়িয়ে এই প্রথা রদ করেন রাজা রামমোহন রায়।
Read more: নরবলি! ওড়িশার জঙ্গল থেকে উদ্ধার বালকের দেহ
প্রসঙ্গত, ভারত দ্রুত উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হলেও তান্ত্রিক, ওঝা এবং স্বঘোষিত ধর্মগুরুরা মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে চলেছে। নরবলির মতো প্রথা ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা হলেও তা যে বন্ধ হয়েছে, তাই সেটা বলা এখনই সম্ভব হচ্ছে না।