পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্যে তথা সারা দেশে পেট্রোলের অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের অবস্থা ত্রাহি-ত্রাহি। একদিকে করোনা সংক্রমণের দাপটে মানুষের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। তার ওপর পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখেছেন, যাতে তিনি পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন এবং আবেদন জানিয়েছেন। মমতা তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘কয়েকটি রাজ্যে পেট্রোলের দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি। এর ফলে মানুষের যন্ত্রণা বাড়ছে। সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ে গেছে। কোনও কোনও রাজ্যে আবার পেট্রোল ১০০ টাকার চৌকাঠও পেরিয়ে গিয়েছে। এই বৃদ্ধি অভূতপূর্ব। আমি জানতে পারলাম গত ৪ মে তারিখ থেকে আপনার সরকার আটবার পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়েছে এবং শুধু জুন মাসেই দাম বাড়ানো হয়েছে ছ’বার। বিস্ময়করভাবে এর মধ্যে শুধু এক সপ্তাহে দাম বাড়ানো হয়েছে চারবার। পেট্রোল এবং ডিজেলের এই নিষ্ঠুর মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে বিপর্যস্ত করেছে। শুধু তাই নয়, সারাদেশে এর ফলে বিপজ্জনকভাবে পড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। আপনি হয়তো জানেন, দেশে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি মে মাসে গত বছর মে মাসের তুলনায় ১২.৯৪ শতাংশ বেড়েছে। তেমনি বেড়েছে ভোক্তা মূল্য সূচক ৬.৩০ শতাংশ। এই মুদ্রাস্ফীতির ফলে সাধারণ মানুষকে ভোজ্য তেল ৩০.৮– ডিম ১৫.২– ফল ১২ শতাংশ বর্ধিত মূল্যে কিনতে হচ্ছে। অতিমারির পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সরঞ্জামগুলির দাম বেড়েছে ৮.৪৪ শতাংশ। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূলত দায়ী পেট্রোল এবং ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের আয়ে টান পড়েছে। আমি আপনার জনবিরোধী নীতি দেখে উদ্বিগ্ন। কারণ এর ফলে সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা বাড়ছে। করোনা অতিমারির সময় ভারত সরকার পেট্রোল এবং পেট্রোপণ্য থেকে ৩.৭১ লাখ কোটি টাকা শুল্ক আদায় করেছে। এই বিশাল অঙ্কের আয় হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘গত ছয় বছরে আপনার সরকারের পেট্রোপণ্য থেকে আয় (২০১৪-১৫ সাল) ৩৭০ শতাংশ বেড়েছে। এর কারণ হল কেন্দ্র লাগাতার জ্বালানি এবং পেট্রোলের উপর শুল্ক ‘সেস’ এবং ‘সারচার্জ’ বাড়িয়েছে। যার ফলে অসহনীয় পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এখানে আমি উল্লেখ করতে চাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে পেট্রোল এবং ডিজেলে কিছুটা ছাড় দিয়েছে।
আমি এটা দেখেও উদ্বিগ্ন যে– কেন্দ্র ক্রমাগত সেস বাড়িয়ে চলেছে– যাতে শুল্কের ৪২ শতাংশ রাজ্যের অংশীদারী থেকে রাজ্যকে বঞ্চিত করা যায়। কারণ সেস সম্পূর্ণ কেন্দ্রের প্রাপ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণ যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির বিরোধী। তাই আমার আপনাকে অনুরোধ– পেট্রোল এবং ডিজেলের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের শুল্ক কমান– যাতে মানুষকে সুরাহা দেওয়া যেতে পারে এবং দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়।’