নিজস্ব প্রতিনিধি: লাগাতার বৃষ্টি। সঙ্গে দোসর ডিভিসির বেলাগাম জল ছাড়া। দু’য়ের জেরে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আর উৎসবের মুখে লক্ষ-লক্ষ মানুষের এমন ভোগান্তির জন্য ফের কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ডিভিসি’র বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেছেন– ‘এটা ম্যান মেড বন্যা। বার বার বলা সত্ত্বেও না জানিয়ে জল ছাড়ছে ডিভিসি। না জানিয়ে বাঁধ থেকে জল ছাড়া পাপ– এটা অপরাধ।’
একদিকে যেমন ডিভিসিকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী– তেমনই বন্যা দুর্গত এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সহ একাধিক মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আজ শনিবার আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আকাশপথে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনও করতে পারেন তিনি। যদিও রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়ার অভিযোগ খারিজ করেছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে– ‘রাজ্যকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়েছে।’
গত কয়েকদিন ধরেই দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া– পূর্ব বর্ধমান– পশ্চিম মেদিনীপুর– হুগলি ও হাওড়া জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ডিভিসিও বিভিন্ন বাঁধ থেকে বেলাগাম জল ছেড়ে চলেছে। ফলে বানভাসি হয়ে পড়েছেন লক্ষ-লক্ষ মানুষ। উৎসবের প্রাক্কালে আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। পরিস্থিতি সামলাতে হাওড়া– হুগলিতে সেনাবাহিনীকেও নামাতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার ও তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে চলেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত আগস্ট মাসেও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় লাগাতার বৃষ্টি ও ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ডিভিসির ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। এদিন ফের ডিভিসির ‘অমানবিক’ আচরণ নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ডিভিসিকে নিশানা করে তিনি বলেন– ‘বার বার বলা সত্ত্বেও কথা শুনছে না ডিভিসি। কতবার বলেছি না বলে জল ছাড়বেন না। বলতে বলতে হতাশ হয়ে যাচ্ছি। না জানিয়ে রাত ৩টের সময় যদি জল ছেড়ে দেয়– তা হলে তো মানুষ ঘুমন্ত অবস্থাতেই ভেসে যাবে। এটা পাপ। এটা অপরাধ। আগে থেকে জানলে তো আমরা মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’
একাধিকবার বলা সত্ত্বেও ডিভিসি জলাধারগুলি পরিষ্কার করছে বলেও এদিন ফের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়– ‘জলাধারগুলো পরিষ্কার করছে না– পলি জমে যাচ্ছে। তার ফলে জল ধারণের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে জল ছেড়ে কেন বন্যা ঘটাবে? ঝাড়খণ্ডের জন্য আমরা সমস্যায় পড়ছি। ঝাড়খণ্ডের বোঝা আমরা কেন নেব? মমতা জানান– বানভাসি এলাকার মানুষদের কাছে প্রশাসনের সবরকম সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও উদ্ধারকার্য তদারকির জন্য একাধিক মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়ায় তদারকি করবেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়– বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার একাংশ সামলাবেন মলয় ঘটক। হুগলির বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিম ও বেচারাম মান্নাকে। হাওড়া-হুগলির সীমান্ত এলাকায় তদারকির দায়িত্বে থাকছেন পুলক রায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বে মানস ভুঁইয়া ও পূর্ব বর্ধমানের দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস।