পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: আধাসেনার মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে আত্মহত্যা, স্বেচ্ছাবসরের মতো ঘটনা। গত পাঁচ বছরে ৭০০-অধিক কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস এবং অসম রাইফেলসের জওয়ান আত্মহত্যা করেছেন। পাশাপাশি ৫৫,৫৫৫ অধিক জওয়ান পদত্যাগ ও স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। রাজ্যসভায় এমনই তথ্য দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
জানা গেছে, সম্প্রতি সেনা জওয়ানদের নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে সেনাদের প্রেক্ষাপটে আলোচনা হয়। সেখানেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। যেখানে এই তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছে। যদিও আত্মহত্যার কারণ ‘ব্যক্তিগত’ উল্লেখ করেই রিপোর্টে পেশ করা হয়েছে। তবে অত্যাধিক কাজের চাপ, বিনিদ্র রাত, টানা ডিউটি, পরিবার থেকে দিনের পর দিন বাইরে কাটানোর ঘটনাকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বলেন, ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ),ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস (এনএসজি) এবং অসম রাইফেলসের (এআর) ১৪৪ জন, ২০২১ সালে ১৫৭ জন, ২০২২ সালে ১৪৮ জন, ২০২৩-এ এবং ২০২৪-এ এখনও পর্যন্ত ১৩৪ জন জওয়ান আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া গত ৫ বছরে প্রায় ৪৭, ৮৯১ জন জওয়ান স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন এবং ৭,৬৬৪ জন পদত্যাগ করেছেন।
এদিন আরও জানানো হয়, সিএপিএফ জওয়ানদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। তদন্তে নেমে তারা জানতে পারে, আত্মঘাতী জওয়ানদের ৮০ শতাংশ আত্মহত্যায় ছুটি থেকে ফেরার পর হয়েছে। কেউ স্ত্রী বা পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তো কেউ দাম্পত্যের কলহ অথবা অথবা বিবাহবিচ্ছেদ, আর্থিক সমস্যা এবং সন্তানদের শিক্ষার সুযোগের অভাব ইত্যাদি কারণে আত্মহননের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তারা।
সমস্যার সমাধান কী? এদিন শাহের মন্ত্রক জানিয়েছে, ডিউটি কমিয়ে দেওয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করলে এই ধরণের ঘটনা তুলনামূলক কমতে পারে। তাই এ বছর ৪২,৭৯৭ জন জওয়ানকে কিছু দিনের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৬,৩০২ জন জওয়ান তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ১০০ দিন কাটিয়েছেন। ২০২৩ ও ‘২২ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৮৬৩৬ ও ৭৮৬৪ জন। পাশাপাশি জওয়ানদের সঙ্গে নিয়মিত ভাবে কথাবার্তা বলা হয়। তাঁদের কাউন্সেলিং করা হয়। এদিন সৈনিকদের থাকার ব্যবস্থার উন্নতি এবং পর্যাপ্ত বিনোদনের সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল ও সমাজবিজ্ঞানীরা এই সমস্যাকে অত্যন্ত গুরুতর বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সিএপিএফ জওয়ানদের কাজের চাপ কমানো এবং তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কেন্দ্র সরকারকে আরও সচেতন হতে হবে। কাজের সময় এমনভাবে ব্যবস্থা করতে হবে যাতে জওয়ানরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান।