বিশেষ প্রতিনিধি: যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বেশিরভাগ বাড়ির গৃহবধূরাই বর্তমানে চাকুরিজীবী। ফলে সময়ের অভাবে অনেক সময় পরিবারের সন্তান ও বাড়ির বয়স্কদের সঠিক পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে বয়স্ক আর শিশুকে দেখভালের জন্য একটি বড় সময়ে ব্যয় করতে হয়।
তবে প্রযুক্তির যেভাবে উন্নতি হচ্ছে, তাতে এই ধরনের সমস্যার সমাধান সম্ভব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, আগামীদিনে এমন একটা সময় আসছে যখন এই সব কাজগুলি নিয়ে আর ভাবতে হবে না। কারণ বেশিরভাগ কাজ করে দেবে রোবট। আগামী এক দশকের মধ্যে এসব কাজের ৩৯ শতাংশই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যাবে। আগামী ১০ বছরে কী পরিমাণ গৃহস্থালির কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে—এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ৬৫ জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের একদল গবেষক।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মুদি দোকানের কেনাকাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওচানোমিজু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন, অবৈতনিক গৃহস্থালির কাজে রোবট কিভাবে কাজ করবে? তাদের প্রশ্ন ছিল, যদি রোবটরা আমাদের কাজগুলি নিয়ে নেয়, তাহলে কি তারা আমাদের আবর্জনাও সাফ করতে সক্ষম হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে গবেষকরা জানান, তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো ‘গার্হস্থ্য কার্যক্রমে’ ব্যবহৃত রোবট ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ও বিক্রিত রোবট’ হয়ে উঠেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ‘পিএলওএস ওয়ান’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের পিএইচডি গবেষক ড. লুলু শি জানিয়েছেন, এই ধরনের রোবটগুলি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটায় প্রযুক্তিগতভাবে ৬০ শতাংশ সময় বাঁচিয়ে দেবে। এটি দ্রুত ব্যবহারের মাত্রা বাড়তে পারে। তবে শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার কাজের ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার ২৮ শতাংশ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আরও বক্তব্য, আগামী দশ বছরের মধ্যেই রোবট ঘরের কাজ থেকে মানুষকে মুক্তি দেবে। তবে এটি নিয়ে এখনও অনেক সংশয় আছে, যার গবেষণা চলছে।
প্রযুক্তির যে উৎকর্ষতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে মানুষকে বিশ্রাম দেওয়ার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি দ্রুত কার্যকর হতে পারে। এক দশকে সেটি ৩৯ শতাংশ কাজ করে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। যা আগামীদিনে নয়া দিগন্তের সূচনা করবে।
লন্ডনের কিংস কলেজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সমাজ বিভাগের রিডার ড. কেট ডেভলিন বলেন, প্রযুক্তি মানুষের জায়গা নেওয়ার বদলে বরং তাদের সহায়তাই করবে। এমন রোবট বানানো জটিল ও ব্যয়বহুল, যা একাধিক বা সাধারণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে। আমাদের জায়গা না নিয়ে বরং এই রোবটগুলি মানুষের সহায়তা করবে। এমন সহায়ক প্রযুক্তি বানানো গুরুত্বপূর্ণ।