১২ রবি-উল-আওয়ালের পয়গাম

- আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 12
আহমদ হাসান ইমরান: নবী সা. হচ্ছেন মানুষের জন্য ‘সিরাজুম মুনিরা’। হিজরি সালের রবি-উল-আওয়াল মাস এলেই বিশ্বের সকল মুসলিমদের মধ্যেই সাড়া পড়ে যায়। কারণ, এই মাসেরই ১২ রবি-উল-আওয়াল জন্মগ্রহণ করেছিলেন হযরত মুহাম্মদ সা.। তাঁর অনুসরণকারীরা চেষ্টা করে, নতুন করে নবী মুহাম্মদ সা.-এর শিক্ষা ও আদর্শকে আত্মস্থ করার। পরিবার ও সমাজে মুহাম্মদ সা.-এর জীবন পদ্ধতিকে শুধু নিজে নয়, পারিপার্শ্বিকে প্রতিষ্ঠা করার। তাঁর অনুসারীরা শপথ নেন যে, কোটি কোটি অমুসলিম যারা মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে তেমন অবহিত নন, তাঁদের কাছেও মুহাম্মদ সা.-এর বাণী ও পয়গামকে তুলে ধরার।

রাসূল মুহাম্মদ সা. হচ্ছেন আল্লাহর ম্যাসেঞ্জার বা পয়গামবাহী। তাঁর কাছেই অবতীর্ণ হয়েছিল ঐশী বাণী। রাসূল বা প্রফেট হলেও একইসঙ্গে তিনি ছিলেন মানুষ। এটা সৃষ্টিকর্তা হয়তো এজন্য করেছিলেন, তিনি যেন বিশ্বের সকল মানুষের কাছে আদর্শ বা মডেল হতে পারেন। তাই তিনি নির্জনপ্রান্তবাসী কোনও সন্ন্যাসী না হয়ে সমাজে থেকেই মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করেছেন।
একদিকে তিনি যেমন ছিলেন আধ্যাত্মিক গুরু, অন্যদিকে তিনি একজন সন্তান, স্বামী, পিতা, বন্ধু, বিচারক, ইনসাফ প্রদানকারী এবং মানুষকে সমস্ত ধরনের ভাল কাজে শুধু অনুপ্রেরণা নয়, বরং নির্দেশকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর তাঁর অনুসারীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, তাঁর আনিত ঐশী গ্রন্থ কুরআন এবং তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ করে ইহকাল ও পরকাল উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করা যাবে।
রাসূল মুহাম্মদ সা. সবসময় মানুষকে ভাল কাজের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সমস্ত পাপাচার, অশ্লীল-অশালীন কাজ ও অধিকারহরণ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
সুবিচার, মানুষ-প্রাণী ও পরিমণ্ডলের অধিকার আদায়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি আল্লাহর ইবাদত (ঈশ্বর আরাধনা)-র মধ্যেও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
দুনিয়াতে আল্লাহ্-ভীরু পরহেজগার হয়ে নেক কাজের মাধ্যমে আখেরাতে সাফল্য অর্জন করা যাবে, এই ছিল তাঁর বার্তা। তিনি দুনিয়াদারিতে মত্ত হয়ে আখেরাতকে ভুলে যেতে নিষেধ করেছেন। আবার দুনিয়াকেও উপেক্ষা করতে বলেননি, বরং প্রত্যেককে সমাজে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।
আজও আধুনিক পৃথিবীতে চলছে যুদ্ধ বিগ্রহ, হত্যালীলা, বেইনসাফি, প্রতারণা, ব্যক্তিহত্যা, যেনা, ব্যাভিচার, নারীরা আজও পুরুষের চোখে পণ্য। এই শান্তি ও ইনসাফ বর্জিত পৃথিবীতে নবী সা.-এর শিক্ষা ও আদর্শ খুবই প্রয়োজন। আর তাঁর অনুসারীদের নিজের জীবনে তাঁর পয়গামকে প্রতিভাত করে সমস্ত অমুসলিমদের এবং মুসলিমদের কাছেও এই বার্তা দিতে হবে যে, তিনি ছিলেন শান্তি ও সুবিচারের এক আলোকবর্তিকা, অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত ‘সিরাজুম মুনিরা’। যার মানে প্রজ্বল আলোকপ্রদীপ।
রবি-উল-আওয়াল মাসে নবী বর্ণিত কাজের মাধ্যমে আমাদেরকে সকল মানুষের কাছে সেবা ও ইনসাফের পয়গাম দিতে হবে। আর তাহলেই এই পবিত্র মাসের মর্যাদা রক্ষা হবে।