সাকিল আহমেদ : ১০৭ বছরের বৃদ্ধা সর্বাণু বেওয়ার চোখে ঘুম নেই। একবার চোখের দেখা দেখে চোখ বোজাতে চান পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা। তার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বৃদ্ধা মা তাঁর খোকা যেন ফিরে আসে তার মৃত্যুর আগে। সন্তানকে শেষ দেখার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় আছেন ১০৭ বছরের বৃদ্ধা মা। সংশোধনাগারে বন্দি ছেলেকে একবার দেখার আকুলি বিকুলি বৃদ্ধার চোখে ঘুম নেই। কেউ বাড়িতে এলে বৃদ্ধা মনে করেন তাঁর বাদশা ফিরে এসেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী খোঁড়া বাদশার প্রতি যে তাঁর ভীষণ দরদ। ছোটবেলায় খোঁড়া বাদশার একটা পা পোলিও আক্রান্ত হয়। সেই থেকেই তাঁর অন্য সন্তানের থেকে মায়ের একটু বেশিই দরদ। অন্য ছেলেদের তুলনায় বেশি পক্ষপাতিত্ব।
২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংগ্রামপুর বিষ মদ কাণ্ডে অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আলিপুর আদালত। বিষ মদের চক্রান্তে মারা গিয়েছে বহু মানুষ। তবু ছেলেকে একবার চোখের দেখা দেখতে ইচ্ছা ১০৭ বছরের সর্বাণু বেওয়ার। তিনি নিজেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাই জেলে গিয়ে তাঁর পক্ষে ছেলেকে দেখা অসম্ভব। দীর্ঘ ১১বছর ধরে জেল খাটছে মগরা হাটের বিলন্দপুর গ্রামের খোঁড়া বাদশা ওরফে নূর ইসলাম ফকির। আব্বাকে একবার জেল থেকে প্যারলে মুক্ত করে দাদিমাকে দেখানোর জন্য বারবার মগরাহাট থানায় বড় বাবুর কাছে কখনো পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সেলিম লস্করের কাছে দরবার করেছেন খোঁড়া বাদশার বড় ছেলে সাবির ফকির। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।
তাঁরা দেখছি দেখব বলে এগারো বছর ধরে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। সাবিরের চোখের পানিতে জামা ভিজেছে। তার আব্বার তৈরি বিলন্দ পুর মসজিদে বসে আল্লাহর কাছে বৃদ্ধা দাদিমার হয়ে কাতর প্রার্থনা করেছেন সাবির ফকির। পাইস হোটেল এবং রান্নার গ্যাস, দোকান ভাড়া ব্যবসার হালাল টাকায় মসজিদ বানিয়ে নূর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা মসজিদের নাম দিয়ে ছিল নূর মসজিদ। বড় দাদা শওকত ফকিরের কাছে বলেছিল দাদা আর মদের ব্যবসা করব না। এই মসজিদে জীবন কাটাব। শওকত ফকির রেল লাইনের ধারে মদের ভাটি খানা নিজেই ভেঙে দিয়েছিলেন। দীর্ঘ সাত বছর বন্ধ ছিল চোলাই মদ ব্যবসা। তারপর গোচরণ থেকে কিনে এনে ব্যবসা করতে গিয়ে ফেঁসে যায় খোঁড়া বাদশা। আইনের চোখে দোষী সাব্যস্ত হয় সে, অদৃষ্টের কী পরিহাস!
এলাকায় দান ধ্যান গরিব মিসকীনকে দেখত খোঁড়া বাদশা। আজও বাদশার জন্য তাদের চোখে পানি ঝরে এলাকার হিন্দু মুসলমানের। তাঁদের প্রিয় মানুষটি এখন বন্দি কারাগারে। শোনা যায়, কারাগারের ছোট্ট কুঠুরিতে বাদশার দিনরাত কাটে জিকির করে।