ঢাকা: মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই ব্যয় এখন অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসেবেই মূল্যায়িত হচ্ছে। মুজিববর্ষের নামে কোন মন্ত্রক কত টাকা খরচ করেছে, তার তালিকা করছে অন্তর্র্বর্তী সরকার।
বিশিষ্টজনদের মতে, জনগণের ট্যাক্সের টাকা জনবান্ধব কাজে ব্যয় করা উচিত। তারা বলছেন, মুজিববর্ষ পালন এবং ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণে অপচয়ে জড়িত ও দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে আগেই থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করে।
২০২১ সালে পুলিশের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সারাদেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়। তবে সরকারি সাতশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
প্রতিটি কার্যালয়েই ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। এমনকি কোনো কোনো আঞ্চলিক কার্যালয়েও ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছিল। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়—এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এর মোট ব্যয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে তৈরি করা ম্যুরালটির উচ্চতা ১০ ফুট ও প্রস্থ আট ফুট। নির্মাণে সময় লাগে তিন মাস। ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বেতার পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় মুর্যাল নির্মাণ করে। এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণে পৃথক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণ করেছে।
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, যেকোনো খরচের ক্ষেত্রে খরচের সদ্ব্যবহার খুব জরুরি। আমরা যে ট্যাক্স পেয়ারস টাকাটা ব্যবহার করছি, সেটা জনগণের কল্যাণের জন্য যাতে সরাসরি হোক বা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার একটা সম্পৃক্ততা থাকে। সরকারি যেকোনো ব্যয় করি না কেন, সেটা অবশ্যই আমাদের জনস্বার্থে হওয়া উচিত। আমরা আশা করব, এই চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁদের সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।