চেন্নাই, ১৩
সেপ্টেম্বর: ‘নো হালাল ফুড’! ধর্মীয় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে গিয়ে হয়রানির শিকার
তামিলনাড়ুর তেনকোশির এক হিন্দু হোটেলের মালিক। “হোটেল সারাভানা” সাইনবোর্ড
ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। হিন্দু মালিকের হোটেলে লেখা ‘হালাল অনুযায়ী তৈরি হয়
না’। এই জেলায় সুরান্দাইয়ের সেলভা গণপতির
খাবারের দোকানের নাম ‘হোটেল সারাভানা’। এই সাইনবোর্ডটি নিয়ে হয়রানির শিকার
হতে হচ্ছে মালিক গণপতিকে।
সম্প্রতি একটি
ইউটিউবে গণপতির দেওয়া সাক্ষাৎকারটি ভাইরাল হয়। তারপরেই ঘটনা প্রকাশ্য আসে। হোটেলের মালিক সেলভা গণপতি সাক্ষাৎকার
জানান, মুসলিম দেশগুলির থেকে তাকে জানতে চাওয়া হয়, এই রকম সাইনবোর্ড দেওয়ার অর্থ কি?
গণপতি জানান, মানুষের সুবিধার জন্য এই কাজ করেছেন, অথচ হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। প্রশংসিত
হওয়ার পরিবর্তে সাইনবোর্ডটি সরানোর জন্য অনেকে চাপ দিয়েছেন, যা হতাশাজনক। সাক্ষাৎকারে
গণপতি আরও জানান, আমাদের শহর শিবগুরুনাথ পুরম সুরন্দাই। জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ
হিন্দু এবং মুসলমান খুব
কম। আমাদের শহরে হোটেল
ও কসাইয়ের দোকান হিন্দুদের মালিকানাধীন। মুসলমানদের বেশির ভাগই
দোকানের মালিক নয়, এবং সেখানে খুব
কম লোকই নিযুক্ত। আমরা নিজেরাই মুরগি
কিনি, ছাগল কিনি। ভাইয়ের দোকান আছে, সে
জবাই করে। গণপতি জানান, হালাল
সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না।
সম্প্রতি আমাদের
দোকানে চার-পাঁচজন মুসলমান খেতে এসেছিলেন। মনে হয় তারা প্রতিবেশী
কাদায়ানল্লুরের বাসিন্দা ছিলেন। আমরা তাদের কলা
পাতায় ভাত পরিবেশন করেছিলাম। তখন পর্যন্ত তারা
কিছু জিজ্ঞেস করেনি, কিন্তু আমরা যখন
মাংসের তরকারি দিলাম, তখন তারা জিজ্ঞেস
করল, এটা কি হালাল? আমি ‘না’ বলি। তারা জানান, হালাল ছাড়া ইসলামে খাওয়া নিষেধ। তাদের জিজ্ঞাসা
করলাম এই বিষয়ে আমার কি করা উচিত? তখন তারা বলেন, একটি সাইনবোর্ডে লিখে জানিয়ে দেওয়া
উচিত ‘এখানের খাবার হালাল নয়’। তার পরেই সাইনবোর্ড
লাগিয়ে দিই। গণপতি বলেছেন যে, গ্রাহকদের বিভ্রান্ত
না করে প্রত্যেক ধর্মের প্রতি বিশ্বাস ও সম্মান করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
সেলভা গণপতি
জোর দিয়েছিলেন যে তাদের ছোট শহরে হালাল মাংসের স্থানীয় কোনও সরবরাহকারী নেই। তিনি তার গ্রাহকদের প্রতারিত করতে
চান না। সেলভা আরও জানান, তার হোটেলে যখন মুসলিমরা
আসেন, তখন তিনি সততার সঙ্গে তাদের জানাতে পারেন তার এই হোটেলে হালাল পাওয়া যায় না। তবে তিনি মাছ দিলে তারা খান।
সেলভা জানিয়েছেন,
তিনি বিদেশ থেকে একটানা ফোন পেয়েছেন, টানা ২০ রাত তিনি ঘুমোতে পারেননি। কোনও খবর যাচাই না করেই তারা ফোন করতে
থাকে। খালি রাতেই ফোন করা হত। দিনের বেলা ফোন আসে না, রাতে ফোন করে
বলা হত বিদেশ থেকে কথা বলছি। কেনো এই নাম রাখলাম তাই তার কারণ জানতে
চাওয়া হয়। আমি তাদের জানিয়েছি, মুসলিমদের জনসংখ্যা
এখানে খুব কম। যদি তারা ইচ্ছুক হয়, তাহলে আমি তাদের
জন্য প্রস্তুত করতে পারি।
সেলভা গণপতি আরও জানিয়েছেন, কিছু ফোন কল এই ইস্যুকে
ঘিরে সাম্প্রদায়িক সংঘাত উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি নির্বিকার ছিলাম, কারণ তিনি অন্যদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করতে ও
গ্রাহকদের সঙ্গে স্বচ্ছ থাকতে চেয়েছেন। সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যদি এই অঞ্চলে একটি মুসলিম দোকান থাকতো,
তাহলে সেখান থেকে কি হালাল মাংস কেনার কথা বিবেচনা করতেন তিনি? সেলভা জানান, আমার ভাইয়ের দোকান থেকে আমি মাংস কিনি। না হলে প্রশ্ন উঠতে পারে আপনার ভাইয়ের দোকান থাকতে আপনি মুসলিমদের
দোকান থেকে কিনছেন কেনো?