মুশারফ হোসেন, চাঁচল: বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় সাবির মল্লিককে পিটিয়ে খুনের পর আরও এক বাংলার শ্রমিককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থল এবার রাজস্থান। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম মতিউর। মৃতের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, পেটের টানে বিশ বছর আগে মতি কাজ করতে গিয়েছিলেন বিজেপি শাসিত রাজ্য রাজস্থানে। আর সেখানেই তাকে সেখানকারই কয়েকজন সহকর্মী মিলে পিটিয়ে খুন করেছে। অন্যান্য সহকর্মীর সহযোগিতায় মতিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসা চলাকালীনই মৃত্যু হয় ওই পরিযায়ী শ্রমিকের। ঘটনার খবর পেয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকা জুড়ে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে। খবর পেয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী তজমুল হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত পরিযায়ী শ্রমিক মতির (৪৫) বাড়ি মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের ভিঙ্গল গ্রামপঞ্চায়েতের মিস্কিনপুর গ্রামে। মৃতের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তান। বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে অথৈ জলে গোটা পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজস্থানের জয়পুরে একটি সোনার দোকানে কুড়ি বছর ধরে কাজ করতেন মতিউর। তবে ছুটি নিয়ে পাঁচ মাস আগে বাড়ি এসেছিলেন। তারপর তিনি কিছুদিন আগেই ফের সোনার দোকানে কাজে যোগ দেন। গত আগস্ট মাসের ২৮ তারিখে দোকানের খাওয়ার রুমে ওই পরিযায়ী শ্রমিককে কয়েকজন মিলে মারধর করে বলে অভিযোগ পরিবারের। সহকর্মীদের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চকিৎসা চলাকালীন শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী রৌশনা খাতুন বলেন, পরিবারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন স্বামী। সে আজ আর নেই। ছোট দুই নাবালক ছেলেকে নিয়ে কীভাবে সংসার চলবে, তা ভেবেই দিশেহারা রৌশনা। সরকারের কাছে তার আবেদন, স্বামীর হত্যাকারীরা যাতে ছাড় না পায়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সবরকম সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকের সদ্য বিধবা স্ত্রী।
মিসকিনপুর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যের প্রতিনিধি খাইরুল আলম বলেন, দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে রাজস্থানে জয়পুরে এক সোনার দোকানে কাজ করতেন মতি, খাওয়ার রুমে মতিকে মারধর করে বলে শুনতে পাই আমরা। তারপর ওইখানে থাকা আমাদের গ্রামের শ্রমিকেরা মিলে মতিকে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়।
রাজস্থানেই কর্মরত মতির ছোট ভাই বাহারাম দাদার মৃতদেহ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। তিনি জানান, দাদা হাসপাতালে জানিয়েছিলেন, দুপুরের খাওয়ার সময় সহকর্মীদের সঙ্গে তার বচসা হয়। তখনই তাকে বেদম পেটানো হয়।
অন্যদিকে, পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে শুক্রবারই দেখা করতে যান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিমন্ত্রী তজমুল হোসেন। তিনি বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলার মানুষদের ঘৃণার চোখে দেখে। তাই একের পর এক বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনা জানিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সাংসদ সামিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনা হয়েছে। তাঁর নির্দেশে মৃত শ্রমিকের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের সদস্য ও মালদা জেলাপরিষদের সহকারী সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন। ছুটে যান চাঁচলের মহকুমা শাসক শৌভিক মুখার্জি, হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও সৌমেন দাস, মালতীপুরের বিধায়ক ও জেলা তৃণমূল সভাপতি আবদুর রহিম বক্সি, স্থানীয় জেলাপরিষদ সদস্য মর্জিনা খাতুন-সহ অনেকেই। তাদের সকলের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত শ্রমিকের স্ত্রী রৌশনা খাতুন। সরকারি প্রতিনিধি দল ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মৃত শ্রমিকের পরিবারকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা তাঁরা বিবেচনা করবেন।