নয়াদিল্লি, ৩ অক্টোবর: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও আমরা জাতিগত বৈষম্য দূর করতে পারিনি, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপের সুরে এমনই মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। বৃহস্পতিবার কারাগারে বর্ণভিত্তিক বিচ্ছিন্নতা ও কাজের বিভাজনের অবসানের নির্দেশ জারি করে এমনই বক্তব্য রাখেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি।
এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করেছি। কিন্তু আমরা এখনও এই জাতিগত বৈষম্য দূর করতে পারলাম না। আমাদের ন্যায়বিচার ও সমতার জন্য একটি জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার, যাতে সমস্ত নাগরিক সেখানে যুক্ত হতে পারে।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ভারতের ভবিষ্যত সম্পর্কে ডক্টর বিআর আম্বেদকর সংবিধান সভায় তাঁর শেষ ভাষণে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তা আজও সত্য।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে.বি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, ম্যানুয়াল অনুযায়ী কারাগার পরিষ্কার করা, ঝাড়ু দেওয়া, শৌচাগার সাফাই এই ধরনের কাজগুলি নিম্ন বর্ণের লোকদের দিয়ে করানো হয়ে থাকে আর রান্না করা উচ্চ বর্ণের মানুষকে দেওয়া হয়। যা অনুচ্ছেদ ১৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে। এখনও যেভাবে সমাজে জাতির নামে বৈষম্য হচ্ছে, সেটা দুঃখজনক।
শীর্ষ আদালত অবিলম্বে রাজ্য সরকারগুলিকে ম্যানুয়ালে সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই ধরনের কোনও কাজ কাউকে দিয়ে করানো যাবে না যাতে জাতিগত বৈষম্য বাড়তে পারে। সেইসঙ্গে জেলের রেজিস্টারে বা বিচারাধীন বন্দিদের নাম নথিভুক্ত করার সময় জাতপাতের উল্লেখ করারও প্রয়োজন নেই।
প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, আদালতের উচিত প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তফশিলি জাতি-উপজাতি নয়, পিছিয়ে পড়া মানুষ যাতে অসুবিধায় না পড়ে, সেদিকেও তৎপর থাকতে হবে। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সমাজে এই বৈষম্য, বিভাজন দূর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে জানান। তাঁর বক্তব্য, শুধু কথাতে হবে না, নিপীড়িতদের জন্য সত্যিকারের কাজ করতে হবে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেন, আমাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রয়োজন যেখানে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের ভবিষ্যৎ, কষ্ট, যন্ত্রণা সম্মিলিতভাবে ভাগ করে নিতে পারবে।