পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃআর জি করের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে অনড় প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার রাত্রি ১১টা নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। কর্মবিরতি তোলার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ‘ডেডলাইন’-এর পালটা রাজ্য সরকারকে ‘ডেডলাইন’ দেয় তারা।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ” বিচার পেতে এই দীর্ঘসূত্রিতার ভয় আমরা গোড়া থেকেই পাচ্ছিলাম। হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিমকোর্ট। কলকাতা পুলিশ থেকে সিবিআই তদন্তের হাত বদল হয়ে চলেছে। অথচ বিচার এখনও অধরা।” তাঁরা আরও বলেন, ” সুপ্রিমকোর্টে রাজ্য সরকার ও সরকারের উকিল কপিল সিব্বালকে আমাদের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ও কর্মবিরতিকে যেনতেন প্রকারেণ থামানোর জন্য ন্যাক্কারজনক একটা ভূমিকা আমরা রাখতে দেখলাম। ওনারা বলেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলেই মানুষ মারা যাচ্ছে, রোগী পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে ইত্যাদি। আমরা স্পষ্ট করে মনে করিয়ে দিতে চাই, রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে রোগী পরিষেবা চালু আছে। সিনিয়র ডাক্তাররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে লাখো মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছেন।” পাশপাশি তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা বলেন, ” আমরা রাজ্যবাসীকে এও মনে করিয়ে দিতে চাই, রাজ্যে মোট সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ২৪৫টি। যার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা মাত্র ২৬টি। যার মধ্যে মোট জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা ৭ হাজার ৫০০ জনের বেশি নয়। পশ্চিমবঙ্গে মোট রেজিস্ট্রার ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় ৯৩ হাজার। মাত্র কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে যেখানে সিনিয়র ডাক্তাররা চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন। সেখানকার জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে আছেন বলেই গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে – এই কথাটা তাহলে কী করে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ সরকার মিথ্যা কথা বলেছে। সুপ্রিমকোর্টে মিথ্যা বক্তব্য রাখা হচ্ছে। আমরা মনে করছি এটা আমাদের আন্দোলনকে কালিমা লিপ্ত করে আন্দোলনের প্রতি মানুষের যে বিপুল জনসমর্থন তাকে বিপথে চালিত করার এক ন্যাক্কারজনক প্রচেষ্টা।”
জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, তাঁরা যে পাঁচ দফা নিয়ে আন্দোলন করছেন, সেই দাবি পূরণ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। যদি মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার (সুপ্রিম কোর্ট সেই ডেডলাইন দিয়েছে) মধ্যে রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি মেনে নেয়, তবেই কর্মবিরতি তোলার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। অর্থাৎ তাঁরা কাজে ফিরবেন কিনা, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেইসঙ্গে মঙ্গলবার তাঁরা স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। সেখানে ধর্নাও করবেন প্রতিবাদীরা। পাশাপাশি গোটা ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করা হয়েছে।
হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু গ্রেফতার আগে পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য। কেন, সেই প্রশ্ন আবার তোলা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের কথায়, রাজ্য সরকার এখন পুরো গাফিলতি সিবিআই তদন্তের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। বিরূপাক্ষ বা অভীক দে-কে সাসপেন্ড করা হলেও যথাযথ কারণ দেখানো হয়নি। সন্দীপ ঘোষকে শুধু শো-কজ করা হয়েছে। তাঁদের কটাক্ষ, ‘এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো ঘটনা।’
আন্দোলনকারীদের কথায়, ”এরকম একটি দুর্বল সাসেপনশন অর্ডার কোর্টে গেলেই প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হবে। এটি বাস্তবে গণক্ষোভ প্রশিমত করার জন্য একটি আইওয়াশ ছাড়া আমরা কিছু মনে করতে পারছি না।” তাঁদের দাবি, সুস্পষ্টভাবে রাজ্য সরকার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কড়া ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিক, অভীক দে ও বিরূপাক্ষকে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে সাসেপন্ড করুক স্বাস্থ্যভবন। তাঁরা এও বলছেন, ”আর জি করের মতো অবস্থা আমরা চাই না ভবিষ্যতে কোনও মেডিক্যাল কলেজে হোক। কিন্তু ৯ অগস্টের ঘটনা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এটাও মানতে হবে।