সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে সদ্য শপথ নিয়েছেন মহম্মদ গোলাম রব্বানি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে একরাশ ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই সংকটের সময়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপরে আস্থা ও ভরসা রেখে আমাদের সকলকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব পাওয়ায় যারপরনাই খুশি রাজ্যের সংখ্যালঘু যুবসমাজ। আশায় বুক বাঁধছেন চাকরি প্রার্থী থেকে পিছিয়ে পড়া সমাজের ছাত্র ছাত্রীরা। সংখ্যালঘু সমাজের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ, বেদখল ওয়াকফ সম্পত্তির পুনরুদ্ধার সহ একাধিক বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় পুবের কলম পত্রিকার প্রতিনিধি মিজানুর রহমান রোহিত।
প্রশ্ন: আপনি সদ্য গঠিত মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন, সংখ্যালঘু সমাজের সার্বিক উন্নয়নে নিজের দফতরকে কিভাবে গুছিয়ে নিতে চাইছেন?
মন্ত্রী: প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাব, আমাদের দলের সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর যে দফতর ছিল, সেটা তিনি আমাকে দিয়েছেন। আর এজন্য আমি গর্বিত। বর্তমান আমরা এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করছি। কারন করোনার ভয়ঙ্কর প্রকোপে আজ বিপর্যস্ত জনজীবন। আর এর মধ্যেই আবার কেন্দ্রীয় সরকারের লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে আমাদের রাজ্য। সদ্য অবসর নেওয়া মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যেটা হয়েছে, তা সকলের জানা। এছাড়াও আমাদের চার জন মন্ত্রীকে অনৈতিকভাবে গ্রেফতার করা হল। জামিন হওয়ার পরে আবার তাকে স্টে করা হল। সেটা আবার হাইকোর্টের লার্জার বেঞ্চে গেল। লার্জার বেঞ্চে মামলা মানুষকে জাস্টিস দেওয়ার জন্য হয়ে থাকে। বিচার ডিসমিস করার জন্য নয়। সুপ্রিম কোর্ট ডিসপোস করে দিল। আর এই মুহূর্তে দুঃখের ব্যাপার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ছোটভাই মারা গেলেন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ছোট ভাই প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাদের নিয়ে আমরা গর্বিত, তাঁরা যদি সংকটের মুহূর্তে এত উগ্র আচরণ করে থাকেন, তাহলে কিছু বলার নেই। কে মারা যাচ্ছে, কে জীবিত থাকছে, সেই নিয়ে তাঁদের কিছু যায় আসে না। কিভাবে বাংলাকে শেষ করতে হবে, হেনস্থা করতে হবে, বাংলার ঐতিহ্যের উপরে আঘাত হানতে হবে, সেই পরিকল্পনা এবং কাজ তাঁরা অনবরত করে চলেছেন। তবে ইতিহাস সাক্ষী এগুলো বেশিদিন চলে না। হিটলার, মুসলিনি আজ আর নেই। এদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার দরকার। আজ আমি দফতরে এসেছি, আমার প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি গোলাম আলি সাহেব, দফতরে যতগুলো সার্কেল, স্যারের স্পেশাল সেক্রেটারি, কমিশনার ওবায়েদুর রহমান সাহেব সহ অন্যান্য দফতরের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করলাম। এই দফতরে স্বচ্ছতার সঙ্গে আরও দ্রুতগতিতে কিভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব, সেটা নিয়ে বৈঠক হল।
প্রশ্ন: আপনার দফতর নিয়ে কি বলবেন ?
মন্ত্রী: আমাদের বিভাগে যত অফিসার আছে সবাই খুব দক্ষ। খুব ভালোভাবে কাজ করেন, আর তাদের কাজ করার ইচ্ছেও আছে। আর এই দফতর ভারতে এক নম্বর স্থানে রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আছে হজ কমিটি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই গোটা বিষয়টি দেখেন।
প্রশ্ন: মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন নতুনভাবে কোনও নিয়োগ হয়নি,আর তাই নিয়োগ নিয়ে আপনি কি ভাবছেন?
মন্ত্রী: ২৩৫টি আনএডেড মাদ্রাসা আমরা রেকগনাইজড করতে পেরেছি। আর তাদের বেতনও কিছু দিতে পেরেছি। ১৪টি ইংরেজি মিডিয়াম মাদ্রাসা চলছে। এবং নিয়োগের বিষয়ে বলতে গেলে, অনেকগুলো শূন্যপদ রয়েছে, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলো পূরন করার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: বেদখল ওয়াকফ সম্পত্তির পুনরুদ্ধার ও মুসলিম সমাজের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে কি ভাবছেন?
মন্ত্রী: শুধু ওয়াকফ না, , সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম সহ হজ কমিটি নিয়েও আজ আলোচনা হয়েছে। আধিকারিক, অফিসার যারা ছিলেন তাদের গাইড করার পাশাপাশি, তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও রকম সম্পত্তি কেউ আইন বহির্ভূতভাবে নিতে পারে না। দরকার পড়লে এর জন্য তদন্ত হবে। আর স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করা হবে। সংখ্যালঘু সমাজের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কোন অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করা হবেনা।
প্রশ্ন: পিছিয়ে থাকা এই সংখ্যালঘু সমাজের উদ্দেশ্য কি বার্তা দেবেন?
মন্ত্রী: সংখ্যালঘু সমাজে আমাদের শিক্ষাকেই প্রাধান্য দিতে হবে, আর দরকার সঠিক প্রশিক্ষণেরও। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ছেলে মেয়েদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও উৎসাহ দিতে হবে। আর তবেই কিন্তু আমরা এগিয়ে যেতে পারব। সবশেষে বলব রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ওপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখুন।