বেইরুট, ১৯ সেপ্টেম্বর: লেবাননে পেজার (যোগাযোগের তারহীন যন্ত্র) বিস্ফোরণের পর ফের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগের নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের কারণে এবার অন্তত ৩৭ জন নিহত ও ৪৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রক। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বৈরুতের শহরতলীজুড়ে হিজবুল্লাহ দ্বারা ব্যবহৃত ওয়াকিটকিগুলোতে গতকাল বুধবার বিস্ফোরণ ঘটেছে। যেসব স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেগুলোকে হিজবুল্লাহ’র শক্তিশালী ঘাঁটি হিসাবে দেখা হয়।
আগের দিন মঙ্গলবার হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজারে একযোগে বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। ওই বিস্ফোরণে নিহত কয়েকজনের জানাযার সময়ও সেখানে কিছু বিস্ফোরণ ঘটেছে। মঙ্গলবারের ওই হামলার জন্য হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে দায়ী করলেও এখন পর্যন্ত লেবাননের বিস্ফোরণ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি ইসরাইল। তবে লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, যুদ্ধের নতুন পর্ব শুরু করেছে তার দেশ। সেইসাথে, লেবাননে এই বিস্ফোরণে পর নিজেদের উত্তরাঞ্চল তথা লেবানন সীমান্তে পুনরায় সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন মোতায়েন করেছে ইসরাইল।
লেবাননে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি সকল পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, যোগাযোগের যন্ত্রগুলোকে বিস্ফোরিত করার যুক্তি হলো, একটি বড় সামরিক অভিযানের আগের ‘প্রি-এমপটিভ স্ট্রাইক’। ‘প্রি-এমপটিভ স্ট্রাইক’ বা আক্রমণ প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, তারা কোনও ক্ষতি করার আগেই তাদের অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলা।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থনের কথা বলে থাকে। তারা ইরান দ্বারা সমর্থিত এবং ইসরাইল ও অনেক পশ্চিমা দেশ দ্বারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ। হিজবুল্লাহ বলেছে যে গাজায় যুদ্ধ শেষ হলেই কেবল তারা আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ বন্ধ করবে। হিজবুল্লাহর পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তার একটি ইঙ্গিত গোষ্ঠীটির নেতা হাসান নাসরুল্লাহর বক্তব্যের মাঝে আসতে পারে।
বিস্ফোরিত ওয়াকিটকিতে ‘আইসিওএম-ভি৮২’ লেখা দেখা গেছে। আইসিওএম একটি জাপানভিত্তিক রেডিও যোগাযোগ ও টেলিফোন কোম্পানি। কিন্তু ওই মডেলের ওয়াকিটকিগুলোর উৎপাদন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিস্ফোরিত ওই ওয়াকিটকিগুলোতে পাঁচ মাস আগে কিনেছিল হিজবুল্লাহ। শুধু তাই নয়, পেজারগুলোও প্রায় একই সময়ে কেনা হয়েছিল। যুদ্ধকালীন জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসাবে হিজবুল্লাহর হাতে পৌঁছানোর আগে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হাজার হাজার ওয়াকিটকি জধ করেছিল। মার্কিন ও লেবানন সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস এবং রয়টার্সকে জানিয়েছে যে ইসরায়েল পেজারের ভিতরে অল্প পরিমাণে বিস্ফোরক স্থাপন করেছিলো, যা মঙ্গলবার বিস্ফোরিত হয়েছিল। বৈরুতের একটি হাসপাতালের একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন যে তিনি যে আহতদের দেখেছেন তাদের অন্তত ৬০ শতাংশ একটি চোখ হারিয়েছে। বেশিরভাগই একটি হাত হারিয়েছে।