কিবরিয়া আনসারীঃ ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র রাজত্বে রাশ টানতে চাইছে কেন্দ্র।
এজন্য ওয়াকফ আইনে বড়সড় সংশোধনের প্রস্তুতি চলছে। ওয়াকফ বিল নিয়ে জনগণের অভিমত
জানতে চেয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)। সেমত গণ-ইমেল কর্মসূচি নিয়েছে অল
ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল‘বোর্ড। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজ্যের সমস্ত মুসলিম সংগঠন সহ
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এবার এই কর্মসূচিতে নজিরবিহীন সাড়া মিলল। এ পর্যন্ত জেপিসিতে ৪
কোটির বেশি ইমেল পাঠানো হয়েছে বলে জানাল মুসলিম পার্সোনাল ল‘বোর্ড। ইমেলগুলিতে
ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
বৃহস্পতিবার ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিল করার দাবি জানিয়ে জেপিসিকে ইমেল পাঠিয়েছেন
সাগর হাসান ইসলাম। তিনি বলেন, “বিলে এমন পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ওয়াকফ
বোর্ডের স্বাধীনতা খর্ব করবে। ফলে সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পাবে। এটি
ওয়াকফের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এই বিল পাশ হলে মুসলিমদের ব্যাপক ক্ষতি
হবে।”
এদিকে ল‘বোর্ডের তরফে এক লিফলেট বানিয়ে সামাজিক মাধ্যম, মসজিদ ও বিভিন্ন
সংগঠনকে পাঠানো হয়েছে। লিফলেটে ল‘বোর্ড স্পষ্ট উল্লেখ্য করেছে, যৌথ সংসদীয় কমিটি ওয়াকফ সংশোধনী বিল-২০২৪
সম্পর্কিত মতামত চেয়েছে। একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব, আমাদের মতামত
জেপিসি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। ওই লিফলেটে একটি লিংক এবং কিউআর কোড দেওয়া হয়েছে।
লিংকে ক্লিক করলেই মতামত পাঠানো যাবে। ওই লিংকের মাধ্যমে নিজের মতামত পাঠিয়েছেন
নুর সেলিম ইসলাম। তাঁর কথায়, “ওয়াকফ সম্পত্তি অন্যায়ভাবে বাজেয়াপ্ত করতে চাইছে
কেন্দ্র। এই বিল পাশ হলে মুসলমানদের শোষণের দিকে নিয়ে যাবে। এর বিরুদ্ধে সকলের
দাঁড়ানো দরকার। আমি চাই এই বিল জেনো সংসদে পাশ না হয়। তাঁর জন্যই নিজের মতামত
পাঠিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, ওয়াকফ আইনে অন্তত ৪০টি সংশোধনী আনতে চাইছে কেন্দ্র।
সংশোধনীতে যে কোনও জমিকে ‘ওয়াকফ সম্পত্তি’ ঘোষণা ও তার দখল
নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয়
মন্ত্রিসভা। যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে শুরু থেকেই বিরোধী দলের সদস্যরা একযোগে
বিলটির বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। বিলটি ‘সাম্প্রদায়িক এবং মুসলিম-বিরোধী’ বলে অভিযোগ তুলে
সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে আগেই ‘অসাংবিধানিক এবং
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী’ বলে বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেসও। এই
পরিস্থিতিতে ওয়াকফ আইনে সংশোধনীর মাধ্যমে গেরুয়া শিবির মেরুকরণের রাজনীতিতে শান
দিতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জামাত-ই-ইসলামী হিন্দের রাজ্য সম্পাদক শাদাব মাসুম বলেন, “আনুষ্ঠানিক ভাবে
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে এই কর্মসূচি শুরু করা হয়। দায়িত্বশীল মুসলিম সংগঠনগুলির
পক্ষ থেকে সকলকে নিজেদের মতামত পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। রাজ্যজুড়ে ব্যাপক সাড়া
মিলেছে। শুক্রবারও হাওড়া,
কলকাতা, আসানসোল, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও
নদীয়াতে জুম্মার নামাজের পর মসজিদে গণ-ইমেল নিয়ে শিবির করা হয়। এদিন রাজ্যের
বিভিন্ন মসজিদে থেকেও প্রচুর ইমেল পাঠানো হয়েছে।”
অন্যদিকে মুসলিম পার্সোনাল ল‘বোর্ডের সদস্য আবু তালেব রহমানী ‘পুবের কলম‘কে জানান, “শেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে এখন
পর্যন্ত চার কোটির বেশি ইমেল পাঠানো হয়েছে। জেপিসি যে সময় দিয়েছে তা খুবি
সংক্ষিপ্ত, এত বড় জনসংখ্যার
দেশে মতামত নেওয়ার জন্য মাত্র ১৫ দিন যথেষ্ট নয়।” একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার
সংসদে ওয়াকফ বিল পাশ করলে,
সাংবিধানিক ভাবে
যতদূর যাওয়ার আমরা যাবো।”