পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছেন না প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার গভীর রাতে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তাঁরা। হাসপাতালে রোগী ও চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান উঠছে না।
আন্দোলনকারীরা বলেন, “আমরও কাজে ফিরতে চাই। তার আগে আমাদের ৪ ও ৫ নম্বর দাবি পূরণের বিষয়ে আমরা ফের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইছি। আগামীকাল সকালের মধ্যে আমরা এ ব্যাপারে মুখ্য সচিবের কাছে ইমেল পাঠাব।”
আন্দোলনকারীরা এও বলেন, “হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার প্রশ্নে শীর্ষ আদালতও যেভাবে আমাদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী মৌখিক প্রতিশ্রুতি না দিয়ে হাসপাতালের সুরক্ষা-নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন।”
গত সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক হয়। সুদীর্ঘ সেই আলোচনার পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওদের পাঁচটা দাবির একটা আদালতে বিবেচনাধীন। বাকি চারটের মধ্যে তিনটে আমরা পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আন্দোলনকারীরাও জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর হওয়ার পরেই কাজে ফিরবেন তাঁরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং স্বাস্থ্য দফতরের দুই শীর্ষ কর্তাকে বদলি করেছে রাজ্য। কলকাতা পুলিশের একাধিক পদেও রদবদল করা হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার বোধহয় আন্দোলন প্রত্যাহার করার পথে হাঁটবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাতে সাংবাদিক বৈঠক থেকে জানা গেল, তা হচ্ছে না।আন্দোলনকারীদের কথায়, মহিলা চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্য কর্মীদের রাতের পরিবর্তে দিনের ডিউটি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্য তার আমরা বিরোধিতা করছি। এর ফলে নারী পুরুষ বৈষম্য তৈরি হবে। পরিকাঠামো উন্নয়ন না করে শুধু নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে হাসপাতালের সুরক্ষা সম্ভব নয়। বহু হাসপাতালে জীবনদায়ী ওষুধ থাকে না। ফলে কাজ করতে গিয়ে রোগীর পরিজনদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়। তাই নিরাপত্তা-সহ এই দাবিগুলি যাতে দ্রুত পূরণ হয়, তা নিয়ে আরও আলোচনা জরুরি।”
আন্দোলনকারীদের কথায়, “সরকারি হাসপাতালগুলিতে এখনও পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি কিংবা নিরাপত্তারক্ষী এখনও মোতায়েন হয়নি। বহু জায়গায় নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। কাজে ফেরার আগে এগুলো পূরণ হওয়া জরুরি।’’
রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথা বলা হলেও বহুক্ষেত্রে এখনও সেগুলি রয়েছে বলেও অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। তাঁদের কথায়, শুধু ভেঙে দিলে তো হবে না, কীভাবে হাসপাতালগুলিতে রোগী কল্যাণ সমিতি পরিচালিত হবে, তার জন্য কী রূপরেখা এসব বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া জরুরি। স্বচ্ছতা মেনে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিও তোলেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, এদিন সুপ্রিমকোর্টের শুনানিতেও আন্দোলনকারীদের কাজে ফেরার প্রসঙ্গটি ওঠে। সেখানে জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং জানিয়ে দেন, আজ বা কালকের মধ্যে জিবি বৈঠক করে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি তোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ব্যাপারে গতকালের আগের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘ডাক্তাররা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করতে পারে না। সর্বোচ্চ আদালত তা সমর্থন করবে না। ডাক্তারদের কাজ রোগীদের পরিষেবা দেওয়া।’