আজ সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিন ছিল। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে আরজি কর মামলার শুনানি চলছে। এদিন ফের সুপ্রিম ভর্ৎসনার মুখে পড়ল রাজ্য সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন। আজ দিনের শুরুতেই তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সেই স্ট্যাটাস রিপোর্টটি পড়েন নীরবে। এরপর প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘অভিযুক্তর মেডিক্যাল রিপোর্ট কোথায়?’ জবাবে রাজ্যের তরফের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘কেস ডায়েরির অংশ সেটা। সেখানেই আছে রিপোর্ট।‘
বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ আরজি কর মামলার শুনানির মাঝে বললেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বললেন, সরকারি হাসপাতালের অবস্থা কী আমি জানি। প্রধান বিচারপতির কথায়, তাঁর আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের মেঝেতে ঘুমিয়েছেন। দেখেছেন, চিকিৎসকরা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করেন।
এরপরই এক আইনজীবী সওয়াল করেন, জুনিয়র চিকিৎসকরা হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন, ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করার পর শরীর-মন অবসন্ন হয়ে যায়। তখন কেউ উত্যক্ত করলেও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আর তাঁর শরীরে থাকে না। গুরুতর অপরাধের কথা তো বললামই না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার এই বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এটা লক্ষ্য করা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে জুনিয়র চিকিৎসকরা বিভিন্ন রকমের হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। সেটা কেবল যৌন হয়রানিই নয়। আর এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। আমরা অনেক ইমেল পেয়েছি। জুনিয়র চিকিৎসকদের ৪৮ ঘণ্টা, ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
চিকিৎসকদের হুমকিঃ চিকিৎসকদের আইনজীবীর অভিযোগ, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ১৪ লক্ষ টাকার সিসিটিভি ইনস্টল করেননি। সিসিটিভি থাকলে গোটা ঘটনাটি ট্র্যাক করা যেত। আরজি কর হাসপাতালের ভিতরেই চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত। তাঁদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তদন্তকারীদের কাছে সিল বন্ধ খামে তাঁরা কয়েকজনের নাম দিয়েছেন বলে তাঁরা দাবি করেছেন। আর তারপর থেকেই তাঁদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “কারা নিশানা করছে? আমাদের জানান। আমরা সিআইএসএফকে জানাব।”
সিবিআইয়ের স্ট্যাটাস রিপোর্টঃ সলিসিটার জেনারেল সিবিআইয়ের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা করলেন। নিঃশব্দে পড়লেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তার পর সিটের (SIT) সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। পাশাপাশি রাজ্যের তরফেও এদিন একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘অভিযুক্তর মেডিক্যাল রিপোর্ট কোথায়?’ জবাবে রাজ্যের তরফের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘কেস ডায়েরির অংশ সেটা। সেখানেই আছে রিপোর্ট।‘
এরপরই সলিসিটর জেনারেল সিবিআই-এর তরফ থেকে বলেন, ‘এই ধরনের যে কোনও রিপোর্ট আছে, সেটাই আমরা জানতাম না। আমরা ঘটনার পাঁচদিন পরে যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, তখন সব কিছু বদল করা হয়ে গিয়েছে।‘
জবাবে সিব্বল দাবি করেন, ‘কিছু বদল করা হয়নি। সব কিছুর ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছ।‘ সলিসেটর জেনারেল জানান, দেহ দাহ করার পর রাত ১১.৪৫ মিনিটে প্রথম এফআইআর দায়ের করা হয়। পরিবারকে জানানো হয়েছিল এটা আত্মহত্যার ঘটনা। চিকিৎসকদের চাপে পড়ে ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করানো হয়েছিল।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টঃ প্রধান বিচারপতি এরপর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখতে চান। অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়েরের আগেই ময়নাতদন্ত! অবাক বিচারপতি। সলিসেটর জেনারেল জানান, সেটি পুলিশের কাছ থেকে পেয়েছেন। বিচারপতি পার্দিওয়ালা জানতে চান, কখন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে? কখন এফআইআর হয়েছে? কখন হয়েছে ময়নাতদন্ত? রাজ্যের তরফে আইনজীবী সিব্বল বলেন, সন্ধে ৬টা ১০ থেকে ৭.১০ পর্যন্ত ময়নাতদন্ত চলে। আমাদের কাছে এই গোটা ঘটনার টাইমলাইন রয়েছে, কটায় কখন কোন ঘটনা ঘটেছে। আরেক বিচারপতি মিশ্রর কথায়, সন্ধেয় ময়নাতদন্ত হয়েছে। রাত সাড়ে এগারোটায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এফআইআর হয়েছে রাত পৌনে বারোটায়।
পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্নঃ প্রধান বিচারপতি বলেন, “একটা জিনিস নিয়ে খটকা লাগছে। সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ টালা থানা অভিযোগ দায়ের করল। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থল সিল করল পুলিশ? এতক্ষণ সেখানে কী হয়েছিল?” রাজ্যের তরফে বলা হয়, বিষয়টি এমন নয়। সব কিছুর ভিডিয়োগ্রাফি রয়েছে। সলিসিটর জেনারেল বলেন, “রাজ্য বলছে মৃতার বাবা এফআইআর দায়ের করার অনুমতি দেননি।”
পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলল আদালত। বিচারপতি জে পার্দিওয়ালা আজ মন্তব্য কলেন, ‘রাজ্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছে তেমনটা আমি আমার ৩০ বছরের কর্মজীবনে দেখিনি… প্রথম কথা, এটা কি সত্য যে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ডায়েরি রেকর্ড করা হয়েছিল? দ্বিতীয়, এই নন-মেডিক্যাল সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট কে? তাঁর আচরণও খুব সন্দেহজনক, কেন তিনি এমন আচরণ করলেন?’