Wed, July 3, 2024

ই-পেপার দেখুন

ল’ কলেজটির হিজাব বিতর্ক কি সমাধান হল?

News Desk

Published: 12 June, 2024, 03:25 PM
ল’ কলেজটির হিজাব বিতর্ক কি সমাধান হল?

 

আহমদ আবদুল্লাহ: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলজেডি ল’ কলেজের মাননীয় চেয়ারম্যান শ্রী গোপাল দাস এবং তাঁর সহযোগীদের কী বোধোদয় হল? তাঁরা কি অধ্যাপিকা ও ছাত্রীদের মাথায় স্কার্ফ পরা বা হিজাব পরা নিয়ে একটু নরম হলেন? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাঁরা তাঁদের ‘নিউট্রাল স্পেস’ তৈরি করার বাহানা দিয়ে মুসলিম অধ্যাপিকা ও ছাত্রীদের হঠাৎই হিজাব নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা করেছিলেন। কিন্তু এখন যেন মনে হচ্ছে তিনি একটু নরম হয়েছেন। তার কারণ, বিভিন্ন মহল থেকে অধ্যাপিকা ও ছাত্রীদের হিজাব নিষিদ্ধ করা নিয়ে যে চাপ তৈরি করা হয়, তাতে গোপালবাবু সম্ভবত একটু মনোভাব শিথিল করাকেই যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন। 
প্রথম কথা হল, পশ্চিম বাংলার এবং সম্ভবত সারা ভারতের কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপিকাদের জন্য ড্রেস কোড নেই। ড্রেস কোড করার চেষ্টা করে কলকাতারই দু-একটি স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ নিদান দিয়েছিল যে, জিন্স বা টপ পরে মহিলা শিক্ষিকা বা অধ্যাপিকা ক্লাস নিতে পারবেন না। আর যায় কোথায়! সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বয়ে গেল। বড় বড় কাগজগুলি সম্পাদকীয় লিখল, ‘শিক্ষিকারা যথেষ্ট সচেতন। তাঁহারা কী পোশাক পরিধান করিয়া শিক্ষালয়ে পা রাখিবেন তাহা কর্তৃপক্ষ স্থির করিয়া দিতে পারেন না। ইহা শিক্ষিকাদের স্বাধীনতা, নারী অধিকার, মানবাধিকার সব কিছুর বিরুদ্ধে।’ কাজেই কর্তৃপক্ষের নিদানের সেখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে। 
কিন্তু এলজেডি ল’ কলেজের গোপালবাবু, অশোকবাবুদের মনে হতে থাকে তাঁরা মুসলিম অধ্যাপিকার ক্ষেত্রে হিজাব নিষিদ্ধের ফতোয়া জারি করে পার পেয়ে যাবেন। 
ইতিমধ্যে ফেসবুক, বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চেয়ারম্যান শ্রী গোপালবাবুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নি¨া ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হতে থাকে। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী জনাব সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি সাহেবও এক কড়া ভিডিয়ো বার্তায় এই ঘটনার নিন্দা করেন। বেশকিছু সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানায়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুরও এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছেও একটি বেসরকারি ল’ কলেজের হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ‘পুবের কলম’-কে জানান মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি। 
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর নিয়ে জানা যায় যে, হিজাব পরিধান নিয়ে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাওলানা আজাদ, লেডি ব্র্যাবোর্ন এবং খোদ বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক মুসলিম অধ্যাপিকা ও ছাত্রী শুধু হিজাব নয়, মুখখোলা বোরকা পরেও আসেন।
এই বিতর্ক ও বাদানুবাদের প্রেক্ষিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সনজিদা কাদির ‘পুবের কলম’-কে টেলিফোনে বলেন, তিনি আর এ বিষয়ে বিতর্ক বাড়াতে চান না। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, হিজাব পরার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে। সেই প্রতিবাদ তিনি করেছেন। নিজের দাবির সমর্থনে তিনি ইস্তফাও দেন। কিন্তু এখন বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি নিজে আর এই বিষয়ের মধ্যে থাকতে চান না। তিনি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপিকা কাদির বলেন, আমাকে যে ই-মেল করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিয়ে তাঁদের রিজিড মনোভাব থেকে খানিকটা সরে এসেছেন। তাঁরা ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকার অনুমতি দেবেন বলে জানিয়েছেন। 
অধ্যাপিকা কাদির কি ওই কলেজে আবার অধ্যাপনায় যোগ দেবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি এখন বলতে পারব না। আমি ১০ দিন সময় চেয়েছি। ১০ দিন পরে আমি সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমার ইচ্ছে নেই। 
এ দিকে পিটিআইকে এক বিবৃতি দিয়ে কলেজের চেয়ারম্যান গোপাল দাস জানিয়েছেন, আমাদের কলেজ থেকে কোনও নির্দেশিকা বা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করে। এই বিষয় নিয়ে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন আর কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই। মিস-কমিউনিকেশনেই একটি ভুল বোঝাবুঝির জন্য দায়ী।

Leave a comment