Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন

বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রসংঘ, 'সহিংসতা সমাধান নয়', মত মহাসচিবের

Kibria Ansary

Published: 19 July, 2024, 10:47 PM
বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রসংঘ, 'সহিংসতা সমাধান নয়', মত মহাসচিবের

ঢাকা, ১৯ জুলাই: কোটা বিরোধী ছাত্র বিক্ষোভে ঢাকাসহ সারা দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। বিক্ষোভ-সংঘর্ষে মৃত্যুমিছিল দেখছে দেশ। কোটা বিরোধী আন্দোলনে এপর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষও। এবার বাংলাদেশের চলমান বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রসংঘ। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মোকাবিলা করে দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজতে আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরাস।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব। তাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব ঢাকা কর্তৃপক্ষকে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে এবং চলমান চ্যালেঞ্জের সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন রাষ্ট্রসংঘ। সবাইকে সব দিক থেকে সংযম থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র জানান, 'চলমান চ্যালেঞ্জের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে তাদের শক্তিকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করা দরকার। সহিংসতা কখনই সমাধান নয়।’

এদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ-সংঘর্ষে মৃত্যুমিছিল দেখছে দেশ। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ পাওয়া খবরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। আহত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ।

দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর বুধবার রাতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিক্ষোভকারীরা। ‘পড়ুয়াদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা। এর সমর্থনে গতকাল দলে দলে রাস্তায় নেমে আসেন পড়ুয়ারা। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর ও আওয়ামি লিগ কর্মীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। এপর্যন্ত নিহত ৩৯। এর মধ্যে ঢাকাতেই মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। ঢাকার উত্তরা এলাকাতেই ঝরেছে সাতটি প্রাণ। ঢাকার যাত্রীবাড়ি এলাকায় মৃত্যু হয়েছে এক সাংবাদিকেরও। এছাড়া ধানমণ্ডি, রামপুরা, সাভার ও মাদারিপুর থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নরসিংদী সদর উপজেলায় পুলিসের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে বছর পনেরোর এক স্কুলছাত্র। আর সংখ্যাটা লাফিয়ে বাড়ছে।

বিক্ষোভ দমাতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। লাঠিসোঁটা নিয়ে অনেক জায়গায় ছিলেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। লাঠিসোঁটা নিয়ে নামেন আন্দোলনকারীরাও। দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বড় সংঘাতের খবর আসতে থাকে। রাজধানীর উত্তরা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, নীলক্ষেত, আজিমপুর, তেজগাঁও, শান্তিনগর, মহাখালী, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দিনভর এসব এলাকা ছিল রণক্ষেত্রের মতো। একপর্যায়ে মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির মধ্যে আশ্রয় নেন পুলিশের সদস্যরা। বিকেলে তাঁদের হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যার সময়ও বিভিন্ন জায়গায় ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।

Leave a comment