কৌশিক সালুই, বীরভূম:- বাম আমলে ঘটে যাওয়া নারকীয় গণহত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। প্রায় ৪ দশকের বেশি সময় ধরে চলা ওই গণহত্যা মামলার সাজা সোমবার ঘোষণা করলেন বীরভূমের সিউড়ি আদালতের বিচারক।
আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ৬ সহোদর ভাইসহ আরো তিন তিন ব্যক্তি অর্থাৎ মোট ৯ জনকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলার অপরাধে ১৩ জন অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিল বীরভূমের সিউড়ি আদালতের বিচারক। গত শুক্রবার প্রথম জেলা ও দায়রা বিচার তীর্থঙ্কর ভট্টাচার্য এই মামলায় অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন। এছাড়া আরো দুই নাবালকের ওই ঘটনায় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে মামলা চলছে।
জানা গিয়েছে ১৯৮১ সালের ৭ই আগস্ট মারগ্রাম থেকে ছয় ভাই ও তিনজন প্রতিবেশী ময়ূরেশ্বর থানার ঝিকড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের কোট গ্রামে আসেন বোন ফরিদা বিবির বাড়িতে। বোনের ছেলে অর্থাৎ ভাগ্নে সুস্থ হওয়ার জন্য সেখানে সুফি গানের আসর বসে। আর এই গানের আয়োজনের জন্য গ্রামবাসীদের একাংশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই আগত অতিথিদের ওপর।
অতিথিরা ভয় পেয়ে বাড়ির রান্নাঘরে ঢুকে যায়। সেই সময় অভিযোগ ওঠে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলতে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ওই রান্নাঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেওয়াল ফুটো করে লঙ্কার ধোঁয়াও দেওয়া হয়েছিল সেই সময়। তাতে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় রান্নাঘর থেকে অভিযুক্তরা বাইরে বের করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে মেরে ফেলে। পুলিশ ঘটনায় ১৯৮৬ সালে প্রায় ৭৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। মামলার দীর্ঘসূত্রতার জন্য সেই অভিযুক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বার্ধক্য জনিত অসুখে মারা যান। বর্তমানে তাদের মধ্য থেকে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল।
সিউড়ি আদালতের বিচারক একজন চিকিৎসক ও পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিক সহ ৮ জনের সাক্ষ্যদানের ভিত্তিতে মোট তেরজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। গণহত্যায় মৃত এক ব্যক্তির ছেলে সাপেল শেখ বলেন,” দীর্ঘদিন পরে হলেও অবশেষে আমরা ন্যায় বিচার পেলাম। আমাদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে মামলা তুলে নিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা প্রকৃত বিচার চেয়েছিলাম।
আদালতের রায়ের খুশি আমরা” সিউড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন,” অভিযুক্তদের মৃত্যুজনিত কারণ, কোলকাতা উচ্চ আদালতে মামলার শুনানি হওয়ার জন্য বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছিল। সেই কলকাতা আদালতেরই নির্দেশে বর্তমানে দ্রুত মামলার শুনানি শেষ করে ওই গণহত্যায় ১৩ জন অপরাধীকে বিচারক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাবাস এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদের এক মাসের জেল পাশাপাশি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৩৬ ধারায় বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের অপরাধে ৭ বছর জেল এবং৫০০০ টাকা জরিমানা অনাদের এক মাসের জেল এর সাজা দিয়েছেন বিচারক “।