দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর, : কারো চাপে পড়েই, মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে, দাবি মৃত ছাত্রীর মায়ের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ খবর পেয়েই ভিন রাজ্য থেকে শুক্রবার সকালে বীরভূম চলে আসেন মৃতার মা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোস্টেল ওয়ার্ডেন আমাকে ফোন করে জানান যে, আমার মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আজ সকালেই এখানে এসেছি। কারো কোন কিছুর চাপে পড়েই আমার মেয়ে সুইসাইড করেছে।”
জানা গিয়েছে, আম্রপালি ছাত্রী নিবাসেই বিষ খেয়েছে উত্তরপ্রদেশের বারানসীর ছাত্রীটি৷ বিশ্বভারতীর শিল্প সদনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীটি (অনামিকা সিং)৷ উত্তরপ্রদেশের বারানসীর বাসিন্দা এই ছাত্রী বিশ্বভারতীর আম্রপালি ছাত্রী নিবাসে থেকেই পড়াশোনা করত৷
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রীটি বিষ খায়৷ অসুস্থ অবস্থায় তার সহপাঠীরা প্রথমে তাকে বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করে৷ পরে অবস্থার অবনতি হলে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানেই সন্ধ্যায় চিকিৎসক ছাত্রীটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ এই ঘটনায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ছাড়াই শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ ছাত্রী নিবাসে প্রবেশ করে বলে অভিযোগও ওঠে। আর এই অভিযোগে ছাত্রী নিবাস ঘিরে মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশকে বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা৷ পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবের নেতৃত্বে আধিকারিকরা আসেন, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার আসেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেন৷
ছাত্রী মৃত্যু খবর পেয়েই হাসপাতালে যান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। রাতেই শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ আম্রপালি ছাত্রী নিবাসে আসেন৷ অভিযোগ ওঠে, বিশ্বভারতীর কোন আধিকারিক ছাড়াই কিভাবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর ছাত্রী নিবাসে পুলিশ প্রবেশ করা নিয়ে। ছাত্রী নিবাসের মূল গেটে কেন সিসি ক্যামেরা নেই৷ এই সকল অভিযোগ ওঠে।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রাণা মুখোপাধ্যায়, বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল ঘটনাস্থলে যান। বিশ্বভারতীর তরফে আসেন ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো, নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়, ছাত্র পরিচালক গনেশ মালিকও যান৷ তাদের ঘিরেও স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা৷ পুলিশ জানায়, তথ্য যাতে লোপাট না হয় তার জন্য ঘরটিকে সিল করতে তড়িঘড়ি ঢুকতে হয়েছে।
ছাত্রীদের মধ্যে দেবমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্য রাতে পুলিশ আসা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মেয়েদের হোস্টেলে তাও পুলিশের সাথে বিশ্বভারতীর কোন অধিকারিক নেই কেন? মেয়েদের হোস্টেলের গেটে সিসি ক্যামেরা নেই, বিশ্বভারতীর হাসপাতালের কোন পরিকাঠামো নেই৷ আমরা এর বিচার চাই৷”
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো বলেন, “একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমরা সাথে সাথেই তার পরিবারকে খবর দিয়েছি৷ আর আমরা হাসপাতালে ছিলাম। তাই হোস্টেলে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। যাতে পুলিশ বলতে না পারে আমাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি, তাই পুলিশ হোস্টেলে গিয়েছে। আমরা পরে এলাম।”
বীরভূম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতাল থেকে খবর পেয়েছি আমরা৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে কোন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত করা হবে৷ আর যাতে কোন রকম তথ্য প্রমাণ লোপাট না হয় তাই পুলিশ হোস্টেলের তড়িঘড়ি গিয়ে ঘরটি সিল করেছে৷ প্রয়োজনে ফরেন্সিক দল ডাকা হবে৷ আমরা তদন্তে কোন খামতি রাখব না।”