বিশেষ প্রতিবেদনঃ মহাজাগতিক বিশ্বে প্রতিনিয়ত বিরল ঘটনা ঘটে চলেছে। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সেই রকম একটি ঘটনার সাক্ষী থাকবে পৃথিবী। আকাশে দেখা যাবে দুটো চাঁদ! অদ্ভূত শুনতে লাগলেও সত্যি। কিছু সময়ের জন্য দুটি চাঁদ পাবে পৃথিবী। দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, এই ‘মিনি মুন বা ছোট চাঁদ প্রায় দুই মাস পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরাফেরা করবে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে গ্রহাণুটি। এই গ্রহাণুটির নাম ‘২০২৪ পিটি৫’। গত ৭ আগস্ট এই গ্রহাণুটিকে শনাক্ত করা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে হালেকালা অবজারভেটরিতে অবস্থিত নাসার-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম (অ্যাটলাস) ব্যবহার করে এই গ্রহাণু শনাক্ত করা হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেখা মিলবে দ্বিতীয় চাঁদের। তবে খালি চোখে কি দেখা যাবে এই মিনি মুনকে?
মৃত্যুর গুজব! নিখোঁজ হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার
যুদ্ধ বন্ধে শান্তির বার্তা, জেলেনস্কিকে ফের আশ্বাস মোদির
সম্পর্কের 'হত্যা'! 'খুন করার জন্য দুঃখিত' মাকে খুন করে ইন্সটায় পোস্ট ছেলের
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, না সম্ভব নয়। কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখা যাবে চাঁদটিকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, আকারে ছোট নতুন চাঁদটি অর্জুন গ্রহাণু বেল্টের অন্তর্গত। আর অর্জুন গ্রহাণু বেল্ট পৃথিবী থেকে প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরত্বে অবস্থিত। ফলে অনেক দূর থেকে পৃথিবীকে অনুসরণ করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে। এরপর আবার অর্জুন গ্রহাণু বেল্টে ফিরে যাবে। ফিরে যাওয়ার আগে মাত্র দুই মাস চাঁদের মতো পৃথিবীর আকাশে দেখা যাবে।
‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’ প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০২৪ পিটি ৫, নামে একটি গ্রহাণু পৃথিবীকে অতিক্রম করবে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। গত মাসেই এই গ্রহাণুর অস্তিত্ব মিলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্রহাণুর একটি অংশ মহাকর্ষ বলের কারণে কক্ষপথে ঢুকে যাবে। তা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে আগামী ২ মাস। তার পর ধীরে ধীরে আকর্ষণ কাটিয়ে ফের চলে যাবে নিজের পথে। আর এই প্রদক্ষিণরত গ্রহাণুর অংশকে উপগ্রহ হিসেবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তুলনা করা হচ্ছে চাঁদের ছোট অংশের সঙ্গে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্লোস মার্কোস জানিয়েছেন, অর্জুন গ্রহাণু বেল্টে থাকা গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে সর্বনিম্ন ২৮ লক্ষ মাইল দূরত্বে আসতে পারে। এ অবস্থায় ভূকেন্দ্রিক শক্তি দুর্বল হয়ে গ্রহাণুটি পৃথিবীর একটি অস্থায়ী চাঁদে পরিণত হতে পারে। যদিও গ্রহাণুটি পৃথিবীর চারপাশে একটি সম্পূর্ণ কক্ষপথ অনুসরণ করবে না। নতুন এই ক্ষুদ্র চাঁদকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মিনি-মুন ইভেন্ট বলে ব্যাখ্যা করছেন। কার্লোস মার্কোস আরও জানিয়েছেন, মিনি-মুনটি সাধারণ টেলিস্কোপ বা দূরবীন দিয়ে দেখতে খুব ছোট লাগবে। তবে শক্তিশালী সরঞ্জাম দিয়ে পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এটি শনাক্ত করতে সক্ষম হবেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, মিনি মুন খুব বিরল। গ্রহাণুগুলি সাধারণত গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা পৃথিবীর কক্ষপথে টেনে নেওয়া হয়। কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ বছরে একবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে। তারা এক্সোস্ফিয়ারে থাকতে পারে, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ কিমি (৬২০০ মাইল) উপরে অবস্থিত। মহাকাশের অন্যান্য পাথুরে বস্তুর মতো, মিনি-মুনগুলি ধাতব পদার্থ, কার্বন, কাদামাটি এবং সিলিকেট উপাদানের মিশ্রণে গঠিত হতে পারে।
২০১৮ সালের একটি মিনি-মুন সমীক্ষা অনুসারে, বেশিরভাগ মিনি-মুন মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণু বেল্ট থেকে পৃথিবীর দিকে আসে। পৃথিবীর স্থায়ী চাঁদের বিপরীতে, মিনি-মুনগুলির স্থিতিশীল কক্ষপথ নেই। পরিবর্তে, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা গ্রহাণুগুলি ক্রমাগত সামনে এবং পিছনে টানা হওয়ার ফলে তারা সামনে পিছনে কক্ষপথে ঘোরাঘুরি করে।
একবার মিনি-মুন পৃথিবীর মহাকর্ষীয় টান এড়িয়ে গেলে, এটি আবার মহাকাশে ফিরে আসে। যদিও মিনি-মুন সাধারণত বিরল, তবে ২০০৬ সাল থেকে পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্যে বেশ কয়েকটি সনাক্ত করা হয়েছে। ২০২২ এনএক্স১ মিনি-মুন( ব্যাস ৫ থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে) প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯৮১ সালে, তারপর আবার ২০২২ সালে। ২০৫১ সালে আবার এই মিনি মুন একটি ঘোড়ার নালার কক্ষপথে যাওয়ার জন্য এটি পৃথিবীর কক্ষপথে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। (৫২২)