Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন

বাংলাদেশ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করার অপচেষ্টা কেন?

Bipasha Chakraborty

Published: 07 August, 2024, 02:48 PM
বাংলাদেশ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করার অপচেষ্টা কেন?

 

আহমদ হাসান: বাংলাদেশে যা হয়েছে, তা কোনও পালা বদল নয় বরং সেখানে যা হয়েছে তাকে ছাত্র-জনতার বিপ্লব বলা যায়। প্রথম কোটা আন্দোলন মুখ্য থাকলেও পরে কিন্তু তা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পরিণত হয়। এ কথাগুলি সবারই জানা। বর্তমানে তথ্য অবশ্য চেপে দেওয়া যায়। কিন্তু ইন্টারনেট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং গ্লোবালাইজেশনের যুগে তা খুব একটা সহজ নয়। যখন ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ তুঙ্গে এবং সরকারি বাহিনী ও হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে অকাতরে ছাত্র, যুবক, শিশু মারা যাচ্ছে, গুলিবিদ্ধ হচ্ছে তখন ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেওয়া হয়।

হাসিনা সরকার যে ভুলগুলি করেছিলেন, এটি তার মধ্যে অন্যতম। শেষে দেখা যায়, আওয়ামি লিগ ও তার শাখা-সংগঠনগুলির কিছু ব্যক্তি ছাড়া দেশের সাধারণ মানুষ সকলেই আওয়ামি লিগের শাসন সম্পর্কে বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আর একইসঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে পুলিশ-সেনার গুলিতে মৃত্যুর মিছিল।

এ ছাড়া ওবায়দুল কাদের সাহেব ঘোষণা দেন, এই ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ঠেকাতে ছাত্রলিগের কর্মীরাই যথেষ্ট। কোনও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছাত্রদের একটি দলকে লেঠেলবাহিনী ও কিলিং মেশিন হিসেবে আচরণ করার জন্য প্ররোচনা দেবেন, তা সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। 

এ কথা ঠিক, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেষ পর্যায়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, গণভবনের দরজা বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার জন্য সবসময় খোলা রয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। কারণ, সেনা-পুলিশ ও লেঠেলবাহিনীর হাতে প্রায় ২০০-র মতো আন্দোলনকারীর  মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যাও কয়েক হাজার। এই পরিস্থিতিতে কারও সাহস হয়নি যে, গণভবনে খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। কারণ, ছাত্র-জনতার বক্তব্য ছিল, লাশের স্তূপ ডিঙিয়ে আলোচনা হতে পারে না। যদি সেনা ও পুলিশের উপর ওবায়দুল কাদের-দের দেখা মাত্র গুলি করার আদেশ না থাকত, তাহলে হয়তো নিহতের কাফেলা এত বড় হত না। 

তারপর কী করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে এলেন, সে-কথা এখন সকলেরই জানা। আর সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, নয়াদিল্লিও শেখ হাসিনাকে নাকি জানিয়ে দিয়েছিল, যদি একান্তই ঢাকাতে না থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে তিনি ভারতে চলে আসতে পারেন। আর উপায়ান্তর না দেখে শেখ হাসিনাকেও ভারতেই আসতে হয়েছে। অবশ্য শেখ হাসিনা লন্ডনে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। ভারত কূটনৈতিক তৎপরতা চালালে হয়তো এ অবস্থা পালটে যেতে পারে। 

বাংলাদেশে এখন শেখ হাসিনা বা আওয়ামি লিগ সরকার নেই। ঢাকায় সরকার পতনের পর ওই রাষ্ট্রটিতে এখনও নতুন কোনও সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। ফলে স্পষ্টতই দেশটিতে নৈরাজ্যের মতো এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করা যায়, একটি বেসামরিক জাতীয় সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে আইন-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। 

বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি নয়াদিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা ভারতেরই একটি কোমল ও জোরদার সম্পর্ক রয়েছে। আর তা রয়েছে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার প্রতিও। কিন্তু একইসঙ্গে আবেগ বাদ দিয়ে লক্ষ্য করতে হবে যে, চারবার নির্বাচনে জয়ী শেখ হাসিনার মসনদে থাকাটা গণতান্ত্রিক ছিল কি না।

দু-একটি রাষ্ট্র বাদ দিয়ে সকলেরই অভিমত হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি। তিনি আক্ষরিক অর্থেই ‘ক্ষমতা দখল’ করেছিলেন। আর তাই তিনি বেশকিছু ভালো কাজ করা সত্ত্বেও দ্রুত গণমানুষের আস্থা হারিয়েছিলেন। আর আওয়ামি লিগের দুর্নীতি ও গুম, খুন, র‌্যাব ও পুলিশের বেআইনি ব্যবহার যেমন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তেমনি দেশবাসীর কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। এই সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছিল বহুদিন থেকেই। 

সে যাই হোক, একটি অন্তবর্তীকালীন জাতীয় সরকার গড়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা যায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা বাস্তবায়িত হবে। 

হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি বিষয় অন্যতম মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা হল, বাংলাদেশে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ অমুসলিম নাগরিক রয়েছেন, তাঁদের নিরাপত্তার কী হবে? দুঃখের বিষয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ও জাতীয় মিডিয়ায়

ভারতবর্ষে একটি খবর সম্প্রচারিত হচ্ছে যে, বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর ভয়াবহ অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে। এ জিনিস অবশ্যই রুখতে হবে। ভারতের পদক্ষেপ করার প্রয়োজন হলেও তা করতে হবে। কোনও দেশেই সংখ্যালঘুদের উপর যাতে অত্যাচার না হয় তা দেখা সকলেরই কর্তব্য।

সেইসঙ্গে এ কথাও সত্যি, বাংলাদেশে বর্তমানে যে অশান্ত পরিস্থিতি চলছে, তাতে বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছেন ধর্মে মুসলিম। আওয়ামি লিগের দু-চারজন হিন্দু নেতাও নিহত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। বিনা বিচারে কোনও মৃত্যুই বৈধ নয়। সেটা সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর বিচার হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। 

একইসঙ্গে এ কথাও বলা প্রয়োজন, অবস্থা বুঝে স্বার্থান্বেষী ও সাম্প্রদায়িক কিছু মহল ফেক নিউজ ও ভিডিয়ো ছড়াচ্ছে। যেহেতু এগুলি হঠাৎই যাচাই করার সুযোগ নেই, সে জন্য তা অনেকেরই বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। ঘৃনা ও বিদ্বেষ ছড়ানো মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ।

গুজরাত, ভাগলপুর ও দিল্লি দাঙ্গার সময় ভারতবাসী তা প্রত্যক্ষ করেছে এবং দেখেছে যে সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও সংখ্যাগুরুদের হামলায় কতটা অসহায় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটবে না, আর ঘটলে তাকে প্রবলভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এটা মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব। 

ফেক ভিডিয়ো বা খবর পশ্চিমবঙ্গেও উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ ঘোষণা করেছে যে, এই ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষ ও ফেক ভিডিয়ো ও খবর প্রচার করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিভিল সোসাইটির সুধীজনেরাও একই কথা বলেছেন। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে, বাংলাদেশি মিডিয়া সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হলে তা প্রতিরোধ ও জনমত গঠনে বরাবরই এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই কোথাও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নয়, তা নিশ্চিত করাই হোক সকলের দায়িত্ব। ইনসাফ সবার উপরে। আর অবিচার হলে তার পরিণতি কী হয়, বার বার সেই উদাহরণ বিশ্ববাসী দেখেছে। 

Leave a comment